সর্ষের ভূত তাড়াতে আগ্রহী দুদক
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকসহ (ডিজি) নয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক নিজেই।অথচ রহস্যজনক কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নথিপত্র দিতে অসহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নথিপত্র চেয়ে বার বার চিঠি এবং সশরীরে তাগিদ দেওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করছে না।ফলে সর্ষের ভূত তাড়াতে দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ভাটা পড়ে যাচ্ছে।যে সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের নাম ও ক্রমিক নম্বরগুলো হলো- দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) কামরুল হাসান মোল্লা (ক্রমিক নম্বর ০১০৫০৬০৩৩৩), পরিচালক গোলাম ইয়াহিয়া, পরিচালক আবদুল আজিজ ভূঁইয়া (০১০৫০৪১২০৬), উপপরিচালক ঢালী আবদুস সামাদ (০২০৫০২০৯৫৩), আরেক উপপরিচালক এস এম গোলাম মাওলা সিদ্দিকী (০১১৮০১০২৭৫) ও প্রাক্তন উপপরিচালক রঞ্জন কুমার মজুমদার (০১১৫০২০১১৭)।
অভিযুক্ত কর্মচারিরা হলেন- সহকারী পরিদর্শক আবদুস সোবহান (০২১১০৪০১৮৮), কোর্ট সহকারী (এএসআই) নুরুল ইসলাম (০১১৭১৩০০৬০) ও ইসহাক ফকির (০১১৬০৭০০৭৬)।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, দুদকের ডিজিসহ নয়জনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন, নামের সনদপত্র, মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত নাম ও সংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে গত ২৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এর দুইদিন পর দ্বিতীয়বার ২৬ নভেম্বর তাদের স্মরণ করিয়ে ফের চিঠি দেওয়া হয়। তারপরও তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয়, গত ২৪ নভেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর সশরীরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও সিনিয়র সচিবের কাছে গিয়ে দুইবার দেখা করেও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ‘অনুসন্ধানের স্বার্থে আবারও নথিপত্র তলব করে আজ (১৪ ডিসেম্বর) চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নথিপত্র প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হয়েছে।’ইতিমধ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণে কমিশন থেকে অভিযুক্তদের সার্ভিসবুকের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে দুদকের অনুসন্ধান দল।অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্র জানায়, ওই নয়জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণপূর্বক চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে আইন বিভাগের মহাপরিচালক কামরুল হোসেন মোল্লা ও পরিচালক গোলাম ইয়াহিয়া অসত্য তথ্য প্রদান করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে গোলাম ইয়াহিয়া চাকরির প্রচলিত বয়সসীমা শেষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের দেওয়া সুবিধা অনুযায়ী অতিরিক্ত সময় চাকরি করছেন।নিজ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির এ অভিযোগ গত ২১ অক্টোবর কমিশনের মাসিক সভায় উত্থাপিত হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করে কমিশন এতে অনুমোদন দিলে ২২ অক্টোবর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধানী টিম গঠন করে অনুসন্ধান শুরু করা হয়।অনুসন্ধান টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক জুলফিকার আলী। টিমের অন্য সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক এস এম রফিকুল ইসলাম।