বিরতিহীন আন্দোলনের প্রস্তুতি জামায়াতের
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সংলাপ এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিরতিহীন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এজন্য অবরোধের পাশাপাশি অসহযোগ অবস্থান, ঘেরাও কিংবা মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচি পালনের চিন্তা-ভাবনা করছে তারা। সেই সঙ্গে চলমান আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করতে চায় ২০ দলীয় জোটের শরিক দলটি।
দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, ৫ই জানুয়ারির পর আন্দোলন যে গতি পেয়েছে, তাতে কোনভাবেই বিরতি দেয়া যাবে না। ধীর লয়ে হলেও এটাকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে হবে। শেষ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আন্দোলন টেনে নিতে চায় তারা।
এজন্য মাঠে সক্রিয় নেতাকর্মীদের সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দলের জেলা উপজেলা এবং মহানগর পর্যায়ে সব কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ড. রেজাউল করিম বলেন, চলমান আন্দোলন এখন কেবল ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিকল্পধারা, গণফোরাম, জেএসডি এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক মিত্রও গণতন্ত্র রক্ষার এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে।
এককথায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ। এই আন্দোলন ক্রমে একদফায় রূপ নিচ্ছে। তাই এখান থেকে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। সরকারকে অনেক সময় দেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন বালুর ট্রাকে বন্দি।
বন্দি ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ খালেদা জিয়া। এই বন্দিদশা থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে আন্দোলন ক্রমান্বয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তবে জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার যত দ্রুত সমাধানে আসবে ততই মঙ্গল হবে। কোন অজুহাতে এবারের আন্দোলনে বিরতি দেয়া হবে না বলেও জানান শিবিরের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম।
এ ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দলের নীতিনির্ধারকরাও একমত বলে জানান তিনি। রেজাউল করিমের বক্তব্যের সমর্থন মিলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের বিবৃতিতে। হামলা-মামলা ও গণগ্রেপ্তার অভিযান উপেক্ষা করে গণআন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভীত হয়ে সরকার হামলা-মামলা ও গণগ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে চলমান আন্দোলন দমন করার ষড়যন্ত্র করছে। তবু ২০ দলের ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখে জনগণ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি করেছে।
এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সরকার প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরসহ ২০ দলীয় জোটের শ’ শ’ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। এভাবে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। জনগণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার এবং মিছিল, সভা-সমাবেশ করার অধিকারসহ বাকস্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশকে উদ্ধারের জন্য দেশবাসীর সামনে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তাই জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে রাজপথে অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
এদিকে ঢাকায় অবরোধের প্রভাব বাড়াতে এ সপ্তাহের মধ্যেই মহাসমাবেশ করতে চায় জামায়াত। এজন্য ২০ দলীয় জোটের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা আছে বলে সূত্র জানায়। ঢাকা মহানগর জামায়াতের তরুণ সদস্য আতাউর রহমান সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় কূটকৌশলের রাজনীতি করে। এবারও তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতিমাকে সামনে রেখে কূটরাজনৈতিক খেলা খেলছে। তবে মানুষ এটা বুঝে গেছে। তাই ইজতিমার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন চলছে চলবে।
এটা চূড়ান্ত রূপ দিতে জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে আরও কঠিন কর্মসূচি আসছে। জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, সংলাপ এবং নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার অবরোধ অথবা অসহযোগ আন্দোলনের মতো কঠিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তাব ছিল দলটির। ৫ই জানুয়ারিকে সামনে রেখে এমন কর্মসূচি চেয়েছিল দলটির নীতি নির্ধারকরা। সেই মোতাবেক ৫ই জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই থেকেই চলমান আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
জামায়াতের পরিকল্পনা মতো কর্মসূচি চলায় মাঠপর্যায়ে তাদের কর্মী-সমর্থকরাও বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আন্দোলনের গতি বাড়ছে। ইতিমধ্যে বেশ ক’টি জেলায় অবরোধ শ’ ভাগ সফল হচ্ছে। ঢাকায় আন্দোলনের গতি সঞ্চারে অচিরেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হচ্ছে। এরপরই রাজধানীর রাজপথে একযোগে সক্রিয় হবে ২০ দলীয় জোট এমন তথ্য জানায় ওই সূত্র।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য একটি নির্বাচন দরকার। ৫ই জানুয়ারি তিনি সংবিধান রক্ষার সেই নির্বাচন করেছেন। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী তার সেই কথা ভুলে গেছেন। উপেক্ষা করে চলেছেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গণদাবি। এ পর্যায়ে দেশী-বিদেশী সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ চায় এ সরকারের পতন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
এ পর্যায়ে চূড়ান্ত আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। এদিকে চলমান অবরোধে অব্যাহত জনদুর্ভোগের ফলে সাধারণ মানুষ কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে তাও বিচার-বিশ্লেষণ করছে জামায়াতের নীতি-নির্ধারকরা।
এ ব্যাপারে মজলিসে শূরা সদস্য ড. রেজাউল করিম বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সেটাকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এতে সংক্ষুব্ধ জনগণ অচিরেই সরকারের পদত্যাগে এক দফার আন্দোলনে নামবে বলে আমাদের বিশ্বাস।