ভিন্ন কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ, অন্য নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে, বেশির ভাগ নেতাই আত্মগোপনে, সরকারও কোনো ছাড় দেবে না। এমন বাস্তবতার মধ্যেও অবরোধ কর্মসূচি টেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় ভিন্নধর্মী কর্মসূচি যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে ভিন্নধর্মী কর্মসূচি কী, সেটা এখনই পরিষ্কার করে বলতে রাজি হননি নীতিনির্ধারকেরা।এ ছাড়া খালেদা জিয়া নিজেও গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে তিনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আগাম নির্দেশনা দিয়ে রাখছেন বলেও জানা গেছে
আন্দোলন পরিকল্পনায় যুক্ত বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এই আন্দোলনকে তাঁরা ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই হিসেবে দেখছেন। এ ধাক্কায় সরকারকে দুর্বল করে সংলাপ-সমঝোতায় আনতে না পারলে বিএনপির আর ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থা থাকবে না। এই অবস্থায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে যত দিন লাগে, তত দিন সময় নেবে দলটি।এসব নেতার দাবি, সরকারও জানে, এ ধাক্কা সামলাতে না পারলে আওয়ামী লীগকেও রাজনৈতিকভাবে মারাত্মক ঝুঁকির জায়গায় যেতে হবে। এ কারণে আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এত মরিয়া। গ্রেপ্তার অভিযানের পাশাপাশি বিএনপির নেতাদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে তাঁদের বাসাবাড়িতে গুলি ও ককটেল ছোড়া হচ্ছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সোমবার বলেন, ‘এখন আমরা পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছি। অবরোধ চলতে থাকবে। এর পাশাপাশি রাজধানীকেন্দ্রিক ভিন্নধর্মী কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে। আমরা মনে করি, এবারের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারব।’মওদুদ আহমদ এই আশাবাদ ব্যক্ত করলেও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপির সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় সব পর্যায়ের নেতাই আত্মগোপন করেছেন। অধিকাংশ নেতার পরিচিত মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে।অবশ্য মওদুদ আহমদ দাবি করেন, বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য সরকারের তরফ থেকে ছড়ানো হচ্ছে যে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। নেতারা আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখছেন না, এটা সত্য নয়। সব নেতাই উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছেন।
আর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ৫ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মতিঝিল থানায় কেবল তাঁর নামেই ৮টি মামলা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার একদিকে মামলা দিচ্ছে, আরেক দিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নামিয়ে দিয়ে একটি ‘যুদ্ধাবস্থার’ সৃষ্টি করেছে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়েই এবার আন্দোলন শুরু করা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকলেও নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ আছে। খালেদা জিয়া নিজেও নানা মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এমনকি মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রাখছেন। তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে ইতিমধ্যে মাঠের নেতাদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন বলেও তাঁর গুলশান কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা জানান, তাঁরা ধারণা করছেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করাসহ সম্ভাব্য সবকিছু করবে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দলের মুখপাত্র ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলের সংকটকালে হাল ধরার মতো জ্যেষ্ঠ নেতা তরিকুল ইসলামকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি অবরোধের দ্বিতীয় দিনে যশোর শহরে একটি গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় তাঁকে প্রধান আসামি করে মামলা করে পুলিশ। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। পলাতক আসামি হওয়ায় তাঁর বক্তব্য-বিবৃতি দেশের গণমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট।
এই অবস্থায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান। অবশ্য বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, ‘খালেদা জিয়া তো ৩ জানুয়ারি রাত থেকে আধা গ্রেপ্তার হয়েই আছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী তাঁকে জেলে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন।’