ফেব্রুয়ারি থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন!
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির শুরুতেই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর সংলাপে বসতে সরকারকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেবেন তিনি। সংলাপে বসার আগে প্রস্তাবিত ৭ দফা মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারও চাওয়া হবে সরকারের কাছে। সরকারপক্ষ সাড়া না দিলে ফেব্রুয়ারি থেকেই ‘চূড়ান্ত আন্দোলন’ শুরুর ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ নিয়ে রেখেছেন ২০-দলীয় জোটনেত্রী। অসহযোগ আন্দোলন শুরুর বিষয়ে জোটবন্ধু জামায়াতসহ অন্য শরিকদের সম্মতিও নিয়েছেন তিনি। বিএনপির নীতিনির্ধারণীতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন, এমন একাধিক সূত্রে কথা বলে মিলেছে এ তথ্য
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া শুক্রবার রাতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অসহযোগ আন্দোলন শুরুর ইঙ্গিত দেন। কবে থেকে শুরু হতে পারে অসহযোগ কর্মসূচি, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে বলেন, আমরা সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসন চাই। কিন্তু সরকার পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টো আমাদের নেতাদের যেখানে-সেখানে গুলি করে মারছে, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিএনপি নির্মুলের ঘোষণা দিয়েছেন। সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছেন তারা। ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকার। নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এই অবস্থায় অবরোধ-হরতালের মধ্যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদ্ভব না ঘটলে অসহযোগ আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছুই থাকছে না। তবে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অহিংস আন্দোলন করবো।
খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হওয়ার শুরুর দিন ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আছেন, বিএনপির এমন একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, দাবি না মানলে কোনওভাবেই আন্দোলন স্থগিতের পরিকল্পনা খালেদা জিয়ার নেই। শুরুর দিকে রাজপথে সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতির ঘটনায় আন্দোলন বিরতিহীন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা সংশয়ে থাকলেও বর্তমান সেই সংশয় কেটে গেছে তার। পদধারী নেতারা অজ্ঞাত হওয়ার পরও সারা দেশে মাঠের কর্মীরা যেভাবে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে তিনি মাঠকর্মীদের প্রতি সন্তুষ্ট। খালেদা জিয়া মনে করছেন, দাবি আদায় না হওয়ার আগে আন্দোলন স্থগিত করা হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে চরমভাবে। সারা দেশে বাড়বে ক্ষমতাসীনদের তা-ব। এজন্য আন্দোলন থেকে পিছু হটছেন না তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সরকার সংলাপে না বসলে ফেব্রুয়ারি থেকে অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। আগামী দু’চারদিনের মধ্যে দাবি আদায়ের জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠাবেন ২০-দলীয় জোটনেত্রী। এই সময়ের মধ্যে অবরোধ বিরতিহীন থাকবে। একইসঙ্গে ইসু তৈরি হলে অবরোধের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে কয়েক দফা সকাল-সন্ধ্যা হরতালও।
সূত্রমতে, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত এ আন্দোলনকালে গ্রেপ্তার হতে পারেন খালেদা জিয়া, এ বিষয়টিও আগাম বিবেচনায় রেখেছেন তিনি। এজন্য তার অবর্তমানে কে কোথায় কী দায়িত্ব পালন করবেন, তার ছক তৈরি করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ৩ জানুয়ারি অবরুদ্ধ হওয়ার পর খালেদা জিয়া জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন নিয়মিত। গত বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়া ৩০ জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ওইসব ফোনালাপে আন্দোলন আরও তীব্র করতে অহিংসপথে থেকে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলা নেতাদের তিনি বলেছেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় আন্দোলন তীব্র করা না গেলে এক এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য এলাকায় গিয়ে যৌথভাবে ২০-দলীয় জোটের আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখবে। সেক্ষেত্রে এলাকা থেকে এলাকা বিচ্ছিন্ন করে প্রতিটি এলাকায় আন্দোলন আরও জোরদার করা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ নাও পেতে পারে।’
খালেদা জিয়ার এই নির্দেশনার কথা স্বীকার করেছেন বরিশাল জেলা বিএনপির এক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এলাকা থেকে এলাকা বিচ্ছিন্ন করার কথা বললেও অহিংস থাকতে বলেছেন নেতাকর্মীদের। সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি যাতে না হয়, তা বিবেচনায় রেখেই আন্দোলন তীব্র করতে বলেছেন তিনি।’