সন্ত্রাস মোকাবিলায় পাকিস্তানের চেয়ে ভারতই পছন্দের ওবামার
শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমেরিকা পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে ঠিকই, তবু সে দেশ জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। এটা একেবারেই কাম্য নয়। মুম্বাই হামলার চক্রান্তকারীদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’ওবামার এই চড়া স্বরে স্বভাবতই খুশি সাউথ ব্লক। এমন একটি সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করছেন, যখন সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার পারদ বেশ চড়া। গত চার মাস ধরে লাগাতার ছায়াযুদ্ধ চলছে নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে। জঙ্গি অনুপ্রবেশ চলছে বলেও খবর। এই প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউস কেন ইসলামাবাদকে অস্ত্র সাহায্য করছে, তা নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছে মোদি সরকার। ওবামার সফরে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, পরমাণু চুক্তি, পরিবেশ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতির প্রত্যাশা করছে দু’তরফই। এই সময়ে পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকার ‘কোনও নরম মনোভাবের ছায়া’ যাতে আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে না-পড়ে, সে কারণেই ওবামা সক্রিয় হয়েছেন বলে মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।সাধারণভাবে মার্কিন নেতারা দক্ষিণ এশিয়ায় সফরে এলে ভারতের পর পাকিস্তান ঘুরে ফিরতি বিমান ধরেন। অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ভারতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সংক্রান্ত বহু প্রতিশ্রুতি এবং কৌশল শেষ পর্যন্ত লঘু হয়ে গিয়েছে ওই নেতারা ইসলামাবাদে পৌঁছানোর পরে। সেখানে গিয়ে পাকিস্তানকে আরও এক দফা সহযোগিতার কথা ঘোষণা করতে দেখা যায় তাঁদের। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওবামা কিন্তু এবার সেই রাস্তা ধরছেন না।নরেন্দ্র মোদি ভারতে ক্ষমতায় আসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তার হিসেবই কষে চলছে তাঁর সরকার এবং মার্কিন বাণিজ্য সংস্থাগুলি। তাই আসন্ন সফরে ভারত ও পাকিস্তানকে এবার একই বন্ধনীতে রাখেনি ওবামা প্রশাসন। কূটনীতিকদের মতে, পাকিস্তানে না-গিয়ে সন্ত্রাস-বিরোধিতার প্রশ্নে কড়া একটি বার্তাও ইসলামাবাদকে দিতে চাইছেন ওবামা।ওবামার সফরটি নিয়ে শুক্রবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে টেলি কনফারেন্স করেছেন সে দেশের উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে ওবামা প্রশাসনের সন্ত্রাস-বিরোধী ভূমিকার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা হবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় একটি নতুন চুক্তির কথাও ভাবা হচ্ছে।এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রোডস বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া হল আসল ঘাঁটি। সেখানেই আল কায়দার শিকড় গাঁথা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বেশ কিছু আল কায়দা নেতাকে নিশ্চিহ্ন করতে পেরেছেন। এর মধ্যে ওসামা বিন লাদেনও রয়েছে।’অন্যদিকে, ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করে রোডস বলেন, ‘পাকিস্তানে বর্বর জঙ্গি হামলার পর ভারতই সবচেয়ে দ্রুত ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে। পাকিস্তানের মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছে।’ সন্ত্রাস মোকাবিলায় পাকিস্তানের চেয়ে ভারতই যে এখন বেশি পছন্দের, ওবামার নিরাপত্তা উপদেষ্টা সে বিষয়টি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন।