প্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে যারা ছিলেন
রোকন উদ্দিন : ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। আগের দিন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যস্ত হয়ে পড়েন আন্দোলনরত ছাত্রনেতারা। তাদের একটাই ভাবনা -১১ ও ১৩ ফেব্রুয়রির পতাকা দিবস সফল। আর সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হতে থাকে সকল কার্যক্রম। গণসংযোগ প্রচার-প্রচারণা চলতে থাকে দেশজুড়ে। বলা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচী ছিল না।
এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের দিকে। এমআর মাহবুবের লেখা ‘রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন ও একুশের ইতিহাসে প্রথম’ গ্রন্থে প্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন সম্পর্কে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ২ মার্চ ফজলুল হক হলে কামরুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তমুদ্দিন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের এক যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সম্প্রসারণ করে প্রথম সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
(এই সভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। কারণ, পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে উর্দু ও ইরেজির সাথে বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এই সময় তিনি সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বাংলাকে পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলেন।) এটি তমদ্দুন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের যুক্ত রাষ্ট্রভাষা সাব কমিটি বা সম্প্রসারিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে পরিচিত। প্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিল ২৮ জন। এই কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন, শামসুল আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান।
এ ছাড়া কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক আবুল কাসেম (পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আহ্বায়ক), কামরুদ্দীন আহমদ (গণআজাদী ছাত্রলীগ আহ্বায়ক), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ভিপি, এসএম হল), মোহাম্মদ তোয়াহা (ভিপি, ফজলুল হক হল), অলি আহাদ (ঢাকা সিটি মুসলিম ছাত্রলীগ আহ্বায়ক), আব্দুর রহমান চৌধুরী (পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ), শামসুল হক (গণতান্ত্রিক যুবলীগ), লিলি খান (মুসলিম ছাত্রলীগ), আনোয়ারা খাতুন (এমএলএ/পূর্ব-পাকিস্তান মহিলা সংহতি সম্পাদিকা), তোফাজ্জল আলী (এমএলএ, পরে রাষ্ট্রদূত) আলী আহমদ খান (এমএলএ) কাজী নজমুন হক (জিন্দেগী সম্পাদক), আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী (পরে ইনসাফ সম্পাদক), কাজী জহুরুল হক (পূর্ব-পাকিস্তান পিপলস লীগের সেক্রেটারি জেনারেল), নুরুল হুদা (ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভিপি), মির্জা মাজহারুল ইসলাম (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধি), তসাদ্দক আহমদ চৌধুরী (গণতান্ত্রিক যুবলীগের সভাপতি), শাহেদ আলী (সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব-পাকিস্তান রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগ), শওকত আলী আবদুস সালাম (সম্পাদক, দৈনিক পূর্ব-পাকিস্তান), অধ্যাপক রেয়াত খান (একমাত্র উর্দুভাষী সদস্য), খালেক নওয়াজ খান (ছাত্রলীগ), আজিজ আহমদ।