শ্যামনগরে বেড়িবাঁধ ভেঙে দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর প্রায় ২০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে দেড় হাজার বিঘা জমির ঘের প্লাবিত হয়েছে।এ ছাড়া পানি প্রবেশ করেছে নদী সংলগ্ন মাদিয়া, দূর্গাবাটি, আড়পাঙ্গাশিয়া,বয়ারসিং ও হেঞ্চি গ্রামসহ আটটি গ্রামে। সেখানে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই কারণে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নারী ও শিশুদেরকে।রোববার বিকেলের দিকে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে তলিয়ে গেলে এই ঘটনা ঘটে।স্থানীয় গ্রামবাসী রুস্তম আলী, ভবতোষ মন্ডল ও ভবসিন্দু মন্ডল জানান, জরাজীর্ণ বাঁধটি ধসে নদীতে তলিয়ে যায়। এতে পানিতে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে থাকা চিংড়ি ঘের তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধ পাশের খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে হু-হু বেগে নদীর লবন পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
জোয়ারের সময় পানি প্রবেশ করার পর চিংড়ি ঘের প্রধান ঐ অঞ্চলে কোনটা নদী আর কোনটা লোকালয় তা নির্ধারণ করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে গোটা এলাকা যেন একাকার হয়ে যাওয়া এক সমুদ্র। ঘরবাড়ি পানি বেষ্টিত হয়ে পড়ার কারণে অনেকেই বসত ঘর ও বাড়ি ছেড়ে রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে এসে স্থান নিচ্ছে।স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আজ দুপুরে জেয়ারে আরো বেশী বেগে পানি ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্লাবিত করবে। অধ্যাপক দিনেশ চন্দ্র মন্ডল জানান, শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছাড়াই গোটা এলাকা আইলার চেহারা নিয়েছে। ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে প্রবেশকৃত পানি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার সুযোগ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।স্থানীয়রা জানান, রাতে জোয়ারে পানির চাপ আরো বাড়লে তখন ঘরবাড়ি ছাড়ার সুযোগ থাকবে না, তাই দিনের আলো থাকতেই নিরাপদে শিশু ও নারীদেরকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।স্থানীয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, ছয় মাস আগে নতুন বেড়িবাঁধ তৈরির মানচিত্র করা হলেও এখনো নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। সম্প্রতি স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের কাজে হাত দেয়। এরইমধ্যে বাঁধ ধসে পানিতে তলিয়ে যায়। তবে জেলা প্রসাশনের নির্দেশে দ্রুত বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।আজকের মধ্যে বেড়িবাঁধ আটকানো সম্ভাব না হলে দুপুর ও রাতের জোয়ারে গোটা এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে তিনি জানান।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আজকের মধ্যে বেড়িবাঁধ আটকানো সম্ভাব হবে। এ দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার, জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত অংশ পরিদর্শন করেছেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন কবলিত অংশ মেরামতের নির্দেশ দেন।