বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » সিটি নির্বাচনে অনাগ্রহ বিএনপি মিত্রদের

সিটি নির্বাচনে অনাগ্রহ বিএনপি মিত্রদের 

রোকন উদ্দিন : সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপি ইতিবাচক থাকলেও তাতে খুব একটা আগ্রহ নেই দলটির প্রধান রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য শরিকদের। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশের অনিশ্চয়তা, সরকারের প্রভাব খাটানোর শঙ্কা এবং সর্বোপরি ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। একই সঙ্গে এই নির্বাচনে জোটের মনোযোগ চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে বলেও মনে করেন তারা। এমনটিই বলছিলেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। তিনি মনে করেন, আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতেই পরিকল্পিতভাবে এই নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে। এই নির্বাচনে জোট অংশ নিলে খুব একটা লাভ হবে না।তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গেলে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হতে পারে। আর এতে অংশ নিলে খুব বেশি লাভবান হওয়ারও সম্ভবনা নেই। কারন অন্যান্য সিটি নির্বাচন এর প্রমান।

Logo-1427268880

সেখানে নির্বাচত মেয়ররা খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় নেই।’ তাই স্থানীয় নির্বাচনের পরিবর্তে বরং জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন মাওলানা নেজামী।বিএনপি ও জোট সূত্রে জানা গেছে, বিভক্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে শরিকদের সঙ্গে এখানো যোগাযোগ করেনি বিএনপি। বিএনপির বেশিরভাগ রাজনৈতিক মিত্র এখনো জোটের পলিসি নিয়ে ওয়াকিবহাল নয়। যদিও জামায়াত ইসলামীসহ জোটের দু’একটি দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে জামায়াত ইসলামী এই নির্বাচনের না যাওয়ার পক্ষে তাদের মতামত জানিয়েছে। অবশ্য দল ও জোটের ভেতরও নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দুটি মত রয়েছে।সূত্র জানিয়েছে, একটি বড় অংশ মনে করে, গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটিতে যে কোনো কৌশলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। ইতিপূর্বে চারটি সিটিতেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া গত নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিএনপি সমর্থিত মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে অংশ নিলে একদিকে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা আবার সংগঠিত হওয়ার একটি সুযোগ পাবেন।তবে অপর একটি অংশ মুদ্রার অন্য পিঠও দেখান। তাদের মতে, নির্বাচনে গেলে আন্দোলনের ক্ষতি হবে। এ ছাড়া মামলা ও পুলিশের হয়রানির কারণে দল সমর্থিত প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না বলে সংশয় ব্যক্ত করেন তারা। নির্বাচনে জয়ী হয়েও অন্য সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচিত মেয়ররা যে ‘দৌড়ের উপর’ আছেন সেটিও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তারা।নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব খাটাতে পারে, এমন শঙ্কা প্রকাশ করে জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকারের প্রভাব খাটানোর বিষয়টি এড়িয়ে দেওয়া যায়না। শেষ পর্যন্ত যদি তাই হয়, তবে সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আবার জোটের নেতা-কর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে, তাহলে নির্বাচনে গণসংযোগ থেকে শুরু করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাবেন কারা? এজন্য নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পক্ষে যাবে না।’সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান আন্দোলনে ছন্দপতন ঘটবে। আর সেক্ষেত্রে পরে আবার আন্দোলন জমানো যাবেনা বলেও মনে করেন এই জোট নেতা। তবে সবই তার ব্যক্তিগত মত উল্লেখ করে তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেটা ভালো মনে করবেন সেটিই করবেন। এতে জোটের পূর্ণ সমর্থণ থাকবে।দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনে যাওয়ার আগে প্রার্থীদের নির্বিঘেœ প্রচারণা চালানো নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডও চিন্তিত। কারণ সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই আত্মগোপনে। তাছাড়া অনেক কর্মীদের নামেও একাধিক মামলা রয়েছে। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর সরকার তাদের গ্রেফতার করবে না এমন নিশ্চয়তাও নেই। তবে সার্বিক বিষয়ে দব দলের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাবে বিএনপি জোট।ইসির কাছে এই দাবি তুলে ধরার জন্য ইতিমধ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী পেশাজীবিদের দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। সে অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সব দলের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড (সমান সুযোগ-সুবিধা) নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন চার বিশিষ্ট নাগরিক। এমাজউদ্দিন ছাড়াও এই দলে থাকছেন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, গনস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ড. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ।মঙ্গলবার রাতে ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদের এ্যালিফেন্ট রোডের বাসায় ‘শত নাগরিক কমিটি’র এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টার বৈঠকে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ রাইজিংবিডিকে বলেন, নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে জোটের নেতা-কর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা, বিএনপির মহাসচিবসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মীরা জেলে রয়েছে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। আগে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা জরুরী।তিনি বলেন, নির্বাচনেন স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত না হলে এবং লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অর্থহীন। তবে জোটনেত্রী খালেদা জিয়াই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন এবং সেই অনুযায়ী নেতাকর্মীরা কাজ করবেন বলে জানান জোটের অন্যতম শীর্ষ এই নেতা।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone