জামিন পেলেন খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী ৫ মে মামলা দুটিতে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালত খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ৫ মে মামলায় শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার জামিন আবেদনসহ মোট চারটি আবেদন করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সকালে জানান, আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে চারটি আবেদন করা হয়েছে। এগুলো হলো- দুদকের দুই মামলায় দুই জামিন আবেদন, যেসব সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে তাদের পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ আবেদন ও জব্দ আলামতের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার আবেদন। শুনানি শেষে আদালত দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে আদালত শর্ত দেন যে, মামলার ধার্য দিনে খালেদা জিয়া সশরীরে অথবা প্রতিনিধিত্ব করে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। আদালত বলেন, ‘খালেদা জিয়া চাইলে প্রতিনিধিত্ব করে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিতে পারবেন।’
আদালত আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুই মামলায় উচ্চ আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দিলে আমরা তা মানতে বাধ্য। তবে অন্য কোনো কারণে খালেদা জিয়া আদালতে প্রতিনিধিত্ব না করলে তার বিরুদ্ধে ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে।’ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ জজ আদালতের শুনানি কক্ষে প্রবেশ করে বিচারকের কাছে আত্মসমর্পণ করে তার জন্য নির্ধারিত আসনে বসার অনুমতি চান। আদালত তাকে আসনে বসার অনুমতি দেন। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির দুই মামলায় হাজিরা দিতে আদালতের উদ্দেশে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে রওনা দেন খালেদা জিয়া। এর মাধ্যমে টানা ৯২ দিন পর নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হন বিএনপির নেত্রী। সকাল ১০টা ৩৪ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি আদালত প্রাঙ্গনে পৌঁছায়। শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন (৫ জানুয়ারি) ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসের কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ৩ জানুয়ারি গুলশানের কার্যালয়ে গেলে সেখানে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি কার্যালয় থেকে বের হতে চেয়ে পুলিশি বাধায় কার্যালয়ের ভেতর থেকেই সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ছোট ছেলের মৃত্যুসহ শত প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি কার্যালয় ছাড়েননি। এরই মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সর্বশেষ গত ৪ মার্চ খালেদার পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করে ৫ এপ্রিল শুনানির দিন ঠিক করে দেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে দুদক খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর অনেকবার মামলার শুনানির তারিখ পিছিয়ে ইতিমধ্যে ছয় বছর পার হয়েছে। গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণও পিছিয়েছে কয়েক দফা। কয়েক মাস ধরে আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।