এশিয়ান হাইওয়ে ব্যবহারে টোল লাগবে
সরকারের ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়েতে। আর এই হাইওয়ে ব্যবহারে টোল দিতে হবে ব্যবহারকারীদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
বাজেট ঘোষণার পর সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটিগেট পর্যন্ত বিদ্যমান মহাসড়কের বাইরে সমতলভূমির ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।
আশা করা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সিংহভাগ পণ্য আনা-নেওয়া হবে এ রুট দিয়ে। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত, নেপাল, ভুটানও ব্যবহার করতে পারবে এ রুট। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের জুনে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকার দরপত্র অনুমোদন দেয় ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ ছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগেও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।
বর্তমানে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে টু-লেন সংযোগ সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ঢাকার সঙ্গে আরও উন্নততর যোগাযোগ মাধ্যম গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান জানান, যোগাযোগ খাতের বৃহত্তম এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পিপিপি বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ গড়ে তুলতে পিপিপি মাধ্যমকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।পিপিপির ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি ব্যবহারের জন্য যান বাহনকে নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে। এর মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা অর্থ তুলে নেবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের সামনে এই প্রকল্প প্রস্তাবটি তুলে ধরে এডিবি। ওই সময় মহাজোট সরকার পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় প্রকল্পটি তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি। দ্বিতীয় মেয়াদে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও প্রকল্পটি সরকারের সামনে তুলে ধরা হয়। এরই মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে।
গত বছরের জুনে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকার দরপত্র অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ ছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগেও সই হয়েছে চুক্তি।
চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিগুলো হচ্ছে এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, অসিলিয়া ইনজয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল উইথ ওরিয়েন্টাল কনসাল লিমিটেড, জাপান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন উইথ কিস্টালিয়া লিমিটেড এবং নিউজিল্যান্ড অ্যান্ড এসপিই কলসালট্যান্ট লিমিটেড কোম্পানি।
প্রাথমিকভাবে এডিবির তৈরি নকশা অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত রুটটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রচলিত হাইওয়ে বরাবর যাবে। এরপর সরলপথে চাঁদপুর, লাকসাম থেকে ফেনী হয়ে আবার হাইওয়ে সড়ক বরাবর চট্টগ্রাম পৌঁছবে।তবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর এক্সপ্রেসওয়ের এই প্রাথমিক নকশা বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাস অথবা প্রাইভেটকারে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছা যাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে থাকবে না যানজট বা যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং।নির্দিষ্ট হারে টোল দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছা যাবে অতি সহজে। এ জন্য সমতলে এবং উড়ালপথে মোট ২৩২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকা। সময় লাগবে চার বছর।