জুভেন্টাসের রক্ষণ আর রিয়ালের আক্রমণ
এবারের মৌসুমে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে সাতটি ম্যাচে জয়বঞ্চিত ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয় তারা পেয়েছিল অষ্টম প্রচেষ্টায়। আতলেতিকো-বাধা পেরিয়ে আসা স্পেনের সফলতম দল আরো শক্তিশালী রক্ষণভাগের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সেমিফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ জুভেন্টাস। জুভেন্টাসের মাঠে খেলা শুরু হবে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টায়।
চার ম্যাচ হাতে রেখেই এবার ইতালিয়ান সেরি-আর শিরোপা জিতে নিয়েছে জুভেন্টাস। ৩৪ ম্যাচে তাদের জালে ঢুকেছে মাত্র ১৯ গোল। শুধু সেরি-আ নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগেও দারুণ সফল জুভেন্টাসের রক্ষণভাগ। ১০ ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল খেয়েছে তারা। ছয়টি ম্যাচে একবারও বল ঢুকতে দেয়নি নিজেদের জালে।
তিন ডিফেন্ডার জর্জো কিয়েল্লিনি, আন্দ্রেয়া বার্জাগলি ও লিওনার্দো বোনুচ্চি টানা চার মৌসুম একসঙ্গে খেলছেন জুভেন্টাস ও ইতালির জাতীয় দলে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভালো উল্লেখ করে বুনোচ্চি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের রক্ষণভাগই সবার সেরা।
জুভেন্টাসের যেমন রক্ষণভাগ তেমনি রিয়াল মাদ্রিদের শক্তিশালী দিক আক্রমণভাগ। টানা দুবারের বর্ষসেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল, হামেস রদ্রিগেজ, টনি ক্রুজরা যেকোনো রক্ষণভাগে কাঁপন ধরিয়ে দিতে সক্ষম। তবে রিয়াল সমর্থকদের জন্য দুঃসংবাদ, ইনজুরির কারণে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে মাঠে নামতে পারবেন না ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা। একই কারণে ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচকেও দর্শক হয়ে থাকতে হবে।
দারুণ ছন্দে থাকা রোনালদো অবশ্য আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন মাদ্রিদে। গত শনিবার সেভিয়ার বিপক্ষে লা লিগার রেকর্ড ২৫তম হ্যাটট্রিক করা পর্তুগিজ তারকাই জুভেন্টাসের রক্ষণভাগের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। রিয়ালের ডিফেন্সও যথেষ্ট ভালো। গত বছরের অক্টোবরে বুলগেরিয়ান ক্লাব লুদোগোরেৎস রাজগ্রাদের বিপক্ষে একটি গোল খাওয়ার পর এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে আর কোনো গোল হজম করতে হয়নি রিয়ালকে।
জুভেন্টাস সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছিল ১২ বছর আগে। কাকতালীয়ভাবে সেবারও তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রিয়াল। সেবার দুই লেগ মিলে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে উঠেছিল জুভেন্টাস। সেই ম্যাচে দুই দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। দুজনই গোলরক্ষক–জুভেন্টাসের জিয়ানলুইজি বুফন ও রিয়ালের ইকার ক্যাসিয়াস।
১৯৬১-৬২ মৌসুমে এই প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল-জুভেন্টাস। তখন অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ নয়, নাম ছিল ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপ। ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টে এর আগে ১৬ বার মুখোমুখি হয়েছে রিয়াল ও জুভেন্টাস। এর মধ্যে রিয়াল জিতেছে আটটি, জুভেন্টাস সাতটি, অন্য ম্যাচ ড্র। ১৯৯৮ সালের ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়েই সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের দুই পরাশক্তি গত মৌসুমের গ্রুপ পর্বেও মুখোমুখি হয়েছিল। ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল জিতেছিল ২-১ গোলে। আর জুভেন্টাসের মাঠে ফিরতি লেগ ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে।
শুধু দুই দুর্দান্ত দল নয়, লড়াইটা হবে দুই দুর্ধর্ষ ‘ট্যাকটিশিয়ান’-এর মধ্যেও। শক্তি-সামর্থ্যে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও জুভেন্টাস কোচ মাস্সিমিলিয়ানো আল্লেগ্রির কণ্ঠে লড়াইয়ের প্রত্যয়, ‘আমাদের কিছু হারানোর নেই এই কথা আমি ঠিক বলে মনে করি না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা কত দূর পর্যন্ত এসেছি। বেশির ভাগ সুযোগই কাজে লাগিয়েছি। এবার আমরা একটা দারুণ দলের, দারুণ সব খেলোয়াড়দের মুখোমুখি হচ্ছি।
রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তিও যথেষ্ট সমীহ করছেন প্রতিপক্ষকে। তিনি বলেছেন, ‘কেউ সেমিফাইনালে এসেছে মানে তাদের সেই যোগ্যতা আছে। প্রতিযোগিতায় এখন মাত্র চারটা দল টিকে আছে। শিরোপা জয়ের সুযোগ তাই সবারই আছে। এটা চ্যাম্পিয়নদের প্রতিযোগিতা। যাদের সাহস আছে তারা জিতবে। যারা ভয় পাবে তারা হেরে যাবে।