মিয়ানমারে পর্যটন বিপ্লব
মিয়ানমার ভ্রমণে এশিয়া ও ইউরোপের পর্যটকদের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে ১০ লাখ হারে পর্যটক বাড়ছে দেশটিতে। এর একটি বড় অংশ যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের ধারণা পর্যটক বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দেশটি এশিয়ার অন্যতম পর্যটনের দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার ফর হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ইউ তে অং বলেন, তাদের সরকার পর্যটন শিল্পের প্রসারে ২০১২ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় পর্যটনের জন্য আট বছরের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এরই অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি, অত্যাধুনিক হোটেল নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারসহ নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
পর্যটনের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে ৩৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমার। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ই-ভিসা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। যা বিশ্বের ৬৭টি দেশের পর্যটক এই সেবা গ্রহণ করতে পারবে। কর্তৃপক্ষ মান্দালয় এবং নেপিডো বিমানবন্দরেও এই সেবা চালুর পরিকল্পনা করছে।
এছাড়া পর্যটন শিল্প প্রসারের জন্য ভিসা ফি কমাতে মিয়ানমার এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সাথে আলোচনা করছে। ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণ সক্ষমতা দুই দশমিক সাত মিলিয়ন থেকে ছয় মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া ২০১৭ সালের মধ্যে হানথ্রোরওয়েডি, বাগো রিজিওন-এ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির উদ্যেগ নিয়েছে মিয়ানমার।
ইউ তে অং বলেন, প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই লাখ পর্যটক ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে মিয়ানমারে প্রবেশ করতো। সব মিলে ৬ থেকে ৮ লাখ পর্যটক যেতো দেশটিতে। সাম্প্রতিক সময়ের পর্যটনের প্রসারের ফলে নতুনভাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২০১৫ সালে ৫০ লাখ পর্যটকের আশা করছে মিয়ানমার।
২০১১ সাল থেকে মিয়ানমার ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে শুরু করে। ২০১৩ সালে মিয়ানমারে বিশ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ত্রিশ লাখে। আর ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাড়ে ৪০ লাখেরও বেশি পর্যটক মিয়ানমার ভ্রমণ করেছেন।
বর্তমানে ইয়াঙ্গুন, নেপিডো, সোয়াডাগুন পেগোডা, বাগান, ইনলে লেক, কিয়াকটো, মান্দালয় এবং তিনি জানান, নেগপালি বিচ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। সেখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর পাশাপাশি আরো পর্যটন স্পট যেমন পুটো, মায়েক আর্চিপেলাগো, নাগাল্যান্ড, নাট মা টং এবং লইকার মত পর্যটন এলাকাগুলোও জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে সারাবছরই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ পিপাসুরা মিয়ানমারে ঘুরতে যান।
এ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন অব মায়ানমার ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও রেডিয়েন্ট ট্যুর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাও অং হান বলেন, ২০১৪ সালে এ খাতে খুব প্রবৃদ্ধি হয়েছে, আশা করি ২০১৫ সালে প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়বে।
শান ইয়োমা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তে অং হলা বলেন, কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে হোটেলগুলো তাদের রুমের মূল্য কমানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। একইসাথে বিমান সংস্থাগুলো উড়োজাহাজের বহর ও আন্তর্জাতিক রুট বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, ঢাকাসহ বেশ কিছু রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর অনুমতি পেয়েছে দেশটি।