নেইমারের ইতিহাস
কে জানে, সেই রাতেই নেইমার বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন কি না!
পিএসজিকে ৬-১ গোলে হারিয়ে বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রত্যাবর্তনের এক অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছিল যে রাতে। সেই রাত, যখন ম্যাচ শেষে নেইমার দেখেছিলেন, এত কিছুর পরও সতীর্থদের কাঁধে তিনি নন, লিওনেল মেসি! অথচ শেষ ৭ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে বার্সা যে তিনটি গোল করে ইতিহাস গড়েছিল, তার দুটি নেইমারের, অন্যটিও তাঁর পাস থেকে।
শুধু সেই রাতই নয়, এর আগের চার বছরের গল্পটাও তো প্রায় একই। নেইমার বুঝে গিয়েছিলেন, বার্সায় তিনি যত কিছু করেন, শেষ পর্যন্ত মেসির ছায়া হয়ে থাকাটাই তাঁর নিয়তি। অন্তত মেসি আরও যে কদিন আছেন। সব সময় ছায়া হয়ে থাকতে কারই-বা মন চায়! ওদিকে টাকা নিয়ে তৈরি প্যারিস সেন্ট–জার্মেই (পিএসজি)। যেখানে গেলে তিনি শুধু বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারই হবেন না, বেতনটাও হবে বার্সেলোনার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ (বছরে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউরো, বাংলাদেশি টাকায় ২৮৭ কোটি)। ফুলে-ফেঁপে উঠবে তাঁর এজেন্ট ও বাবা নেইমার সিনিয়রের অ্যাকাউন্ট। সবচেয়ে বড় কথা, সেখানে আর কারও ছায়া হয়ে থাকতে হবে না তাঁকে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা ঠিক কবে নিয়েছিলেন, তা বলার উপায় নেই। তবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকা দলবদল-নাটক কাল প্রায় শেষ হয়ে গেল বার্সেলোনার এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায়, ‘নেইমার আজ সকালে তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এসে বার্সেলোনা থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।’ কোথায় যাচ্ছেন নেইমার, সেটা বলেনি বার্সা। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের গন্তব্য কি আর এখন ফুটবল-বিশ্বের কারও অজানা! কালই তো স্প্যানিশ দৈনিকএএস লিখে দিয়েছে, সপ্তাহ শেষেরআগেই নেইমারকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পিএসজি। সম্ভব হলে আগামী শনিবার লিগ ওয়ানে নিজেদের প্রথম ম্যাচটিতেই নেইমারকে খেলাতে চায় তারা।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেই বার্সেলোনা আরও বলেছে, ‘ক্লাব ছাড়তে চাইলে নেইমারকে তাঁর চুক্তি অনুযায়ী বাই আউট ক্লজের (১ জুলাইয়ের পর থেকে যা ২২২ মিলিয়ন ইউরো, বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার ১০৬ কোটি প্রায়) পুরোটা দিতে হবে।’ নেইমারকে পাওয়ার জন্য সেটি দিতেও পিএসজির কোনো আপত্তি নেই বলেই তো গত কিছুদিন ফুটবল-বিশ্ব তোলপাড় করে তোলা এই নাটকীয়তা। উয়েফার আর্থিক সদাচরণনীতি মেনে কীভাবে টাকাটা শোধ করা যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বার্সার এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে গতকাল দিনভরই নাটক চলেছে নেইমারের দলবদল নিয়ে। সকালে ন্যু ক্যাম্পের অনুশীলন মাঠে এসেই নেইমার কথা বলেন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের সঙ্গে। অনুশীলনে যোগ না দেওয়ার অনুমতি চান। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই দলবদলের ঝামেলা মিটছে, তত দিন পর্যন্ত কোচ তাঁকে ছুটির অনুমতি দেন। প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে ছিলেন নেইমার। এই সময়ের সতীর্থদের জানিয়ে দেন, তিনি আর থাকছেন না তাঁদের সঙ্গে। বার্সা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দেওয়ার পর মেসি নেইমারের সঙ্গে বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি দিয়ে একটি ভিডিও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন। সঙ্গে লেখেন, ‘বন্ধু, তোমার সঙ্গে এই বছরগুলো কাটানো ছিল অনেক আনন্দের। জীবনের নতুন ধাপে তোমাকে শুভকামনা জানাই।’
জীবনের নতুন ধাপ তো বটেই! বিশ্ব কাঁপিয়ে যে ধাপে পা দিলেন নেইমার।