বিকৃতি ও ‘সীমাহীন চামচামীর’ মাধ্যমে দলে নিজের অবস্থান পোক্ত করার এক জীবন্ত নিদর্শন!
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শোক প্রকাশে শিয়াদের মতো মাতম করে তোপের মুখে হাজী ইকবাল
১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে ‘হায় মুজিব হায় মুজিব’ মাতমে নিজের শরীর থেকে কথিত রক্ত ঝড়ানোর চেস্টায় জিঞ্জির চাকু দিয়ে আঘাত করে শিয়াদের মতো মাতম করেছেন চট্টগ্রাম ১০ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হাজী ইকবাল ও তার অনুসারীরা ।
গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রাক্কালে ব্যাতিক্রমধর্মী শোক মিছিলে কথিত ‘রক্ত ঝরানোর’ এই মাতম করেন তারা।
অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরত এনে ফাঁসি কার্যকর এবং খুনিদের আত্মীয় স্বজনদের সরকারি চাকরি হতে বরখাস্তের দাবিতে মানব বন্ধন ও এমন ব্যতিক্রমি শোক প্রকাশের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের একজন নেতা।
তবে হাজী ইকবালের এমন ‘শোক প্রকাশের ব্যতিক্রমি প্রকাশভঙ্গীকে ‘উদ্ভট’ দাবী করে কঠোর সমালোচনায় সরগরম হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। আর সমালোচনাকারীদের বেশিরভাগই আওয়ামী পন্থী অনলাইন একটিভিস্ট।
আয়োজন পরবর্তি সময়ে হাজী ইকবাল জানান, বিদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু খুনীদের ফিরিয়ে আনার দাবীতে এই আয়োজন। তিনি আরও বলেন, যদি মক্কা মদিনা যেতে পারি তাহলে ১৫ আগষ্ট সকাল থেকে দোয়া করবো আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।
নিজের ফেসবুক আইডিতে এই আওয়ামী লীগ নেতা লিখেছেন,
”আজকের দিনটি আমার জন্য স্বরনীয়। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা। থিম নিয়ে আজ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে জিন্জির চাকু দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে দিলাম। জয়বাংলা বলে আগে বাড়ো। শোক মাতমে ঢাকা চলো।”
তবে নিজের রক্ত বন্যা ঝড়ানোর দাবী করলেও পুরো ভিডিওর কোথাও রক্ত ঝড়তে দেখা যায়নি ।
সামাজিক মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার ঝড়
শরিফুল ইসলাম নামের একজন এক্টিভিস্ট লিখেছেন,
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এর চেয়ে অপমানজনক ট্রল আর হতে পারে না। তারা সিম্পলি শেখ মুজিব নামটাকেই পাবলিকের কাছে ঘৃন্য আর লজ্জার একটা নামে পরিনত করছে।
তাজমুল আকতার লিখেছেন,
হায় মজিব, হায় মজিব করা ওই চাটার দল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পর কি করেছিল?
তার বয়স তো অনেক, সে যদিই সত্যিই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে তাহলে তো সেইসময় তার শক্তি দিয়ে ওই হত্যাকারীদের বিপক্ষে লড়ার কথা ছিল।
৫ম শ্রেণীর এক শিশুর আকা ছবি কয়েকদিন আগে আরেক চাটার বাচ্চার অনুভূতিতে আঘাত হেনেছিল। ওই চাটার বাচ্চাই বা কি করেছিল যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন যে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যাবহার করে আত্বপ্রচারণা বন্ধ করবেন কিন্তু কই সেই কথার সাথে পদক্ষেপ?
বঙ্গবন্ধু গাফফার চৌধুরীকে বলেছিলেন, ‘দ্যাখো চৌধুরী, আওয়ামী লীগ একটি মাল্টিক্লাস পার্টি। আমি তার নামের আগে কৃষক শ্রমিক লাগিয়েছি বৈকি, কিন্তু দলটির চরিত্র এখনও বদলাতে পারিনি, রাতারাতি তা সম্ভবও নয়। আমার দলে নব্যধনীরাও আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় তাদের লুটপাটের সুযোগ বহুগুণ বেড়ে গেছে। আমি তাদের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই বাকশাল করেছি। যদি এই ব্যবস্থা সফল করতে ব্যর্থ হই এবং আমার মৃত্যু ঘটে, তাহলে দলকে কব্জা করে ওরা আরও লুটপাটে উন্মত্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের মূলমন্ত্রের শত্রুপক্ষের নীতি ও চরিত্র অনুসরণ করে আওয়ামী লীগেরও চরিত্র ও নীতি পাল্টে ফেলতে পারে। যদি তা হয়, সেটাই হবে আমার দ্বিতীয় মৃত্যু। সেজন্য আগেই বলেছি, আমার দল, আমার অনুসারীদের হাতেই যদি আমার এই দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটে, তাহলে দীর্ঘকালের জন্য বিস্মৃতির অন্ধকারে চলে যেতে হবে। কবে ফিরব তা জানি না।’
আওয়ামীলীগ এর নামসর্বস্ব সমর্থকেরা কি বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার হত্যা করছে না এখন?
নিউ ফিড শুধু হায় মুজিব হায় মুজিব! ?
ফেসবুকে শিমুল লিখেছেন,
হায় আল্লাহ এটা দেখার বাকী ছিল বুঝি!!!
এটা কোন ধরনের শোক!!!
নাউজুবিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ
ধর্মের অবমাননা, মস্তিস্কের অস্বাভাবিক বিকৃতি এবং সীমাহীন চামচামীর মাধ্যমে দলের জায়গা পোক্ত করার এক অপূর্ব নিদর্শন।
ফেসবুকে এম কায়সার হামিদ লিখেছেন,
ওরা কারা ?
হায় মুজিব হায় মুজিব বলে নিজের পিঠে চাবুক আর দোররা মারছে? ওরা শো অফ করে, অতিভক্তি দেখিয়ে কি প্রমান করতে চায়? ১৯৭৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এরা ছিল কোথায়?
যে সম্প্রদায়ের বেইমানি এবং ধোকাবাজির কারণে কারবালার ময়দানে হযরত হোসাইন রা: কে নির্মম ভাবে হত্যা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সম্প্রদায়ের লোকেরাই এখন শিয়া নাম ধারণ করে মাতম করে। তারা বংশ পরম্পরায় নিজেদের পুর্ব পুরুষের পাপ মোছনের জন্য যুগের পর যুগ ধরে বিলাপ ও নিজেদের কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে।
বঙ্গবন্ধুর সাথে যারা বেইমানি করেছিল তাদের বংশধরেরা এসব করলে ঠিকাছে। তয়, এদেরকে বঙ্গবন্ধু প্রেমী বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক বলে মনে করার কোন কারণ নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারকরা হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে শো অফ করে অতিভক্তি দেখায় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারকরা শুধু বুকের ভেতর বোবাকান্নায় গুমরে কেঁদে মরে।