নাইকোর সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে যাবে: হাইকোর্ট
গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য এক যুগের বেশি আগে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সঙ্গে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর করা যৌথ উদ্যোগ (জয়েন্ট ভেনচার) চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পেট্রোবাংলার সঙ্গে নাইকোর গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তিও বাতিল ঘোষণা করেছেন উচ্চ আদালত।
বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন। তথ্য পর্যালোচনা করে রায়ে বলা হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে ওই চুক্তি দুটি হয়েছে। যত দিন সুনামগঞ্জের ছাতকের টেংরাটিলায় বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায় ও অর্থ আদায় মামলার নিষ্পত্তি না হয়, তত দিন নাইকোকে কোনো ধরনের পেমেন্ট করা যাবে না। ওই দুই চুক্তির আওতায় নাইকো কানাডা ও নাইকো বাংলাদেশের সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে যাবে। এ ছাড়া ব্লক-৯-এ নাইকোর যে সম্পত্তি আছে, তা জব্দের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অনুকূলে যাবে।
আদালতে রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব-উল আলম। নাইকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সালিসে (বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা) নিয়োজিত আইনজীবী মঈন গনি।
পরে মঈন গনি বলেন, এটি স্বীকৃত যে নাইকো দুর্নীতির মাধ্যমে এই দুটি চুক্তি করে। এ কাজে তৎকালীন নাইকোর এজেন্ট কাসেম শরীফের সঙ্গে নাইকোর চার মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছিল। নাইকো একজন মন্ত্রীকে ঘুষও দিয়েছিল। এসব কার্যক্রম দণ্ডবিধির ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের লঙ্ঘন বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
বাপেক্সের সঙ্গে নাইকোর করা যৌথ উদ্যোগ চুক্তি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৬ সালের ৯ মে রুল দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত ওই চুক্তির কার্যকারিতা স্থগিত করেছিলেন।
জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে এই রুল ও স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবং নাইকো কানাডা ও নাইকো বাংলাদেশকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।
রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীরা জানান, ২০০৩ সালে বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য নাইকোর সঙ্গে দুটি চুক্তি করে বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা। একটি বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি, অপরটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তি। চুক্তি দুটিকে চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।
দেশের কয়েকটি প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য ওই চুক্তি দুটি হয়েছিল। সেই অনুসারে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে নাইকো গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করে এবং সুনামগঞ্জের ছাতকের টেংরাটিলায় কূপ খনন করতে গিয়ে দুবার বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর থেকে পেট্রোবাংলা নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছে। আর নাইকো ইকসিডে (বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত) গিয়ে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার জন্য মামলা করে।