‘সরকারিভাবে যেন কেউ হজে না যায়’
সরকারিভাবে হজে গেলে কোনো সম্মান নেই। কেউ আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। সেখানে আমাদের যে খাবার দিয়েছে তা খুবই খারাপ। মুরগির সেদ্ধ মাংস আর ভাত দিয়েছে, আমরা খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম তবু খাবার দেখে খেতে ইচ্ছে হয়নি। আমরা কতোবার যে বলেছি, খেতে পারছি না, বাঙ্গালি খাবারের মতো একটু মশলা দিয়ে রান্না করে আমাদের খেতে দিন। না হয় রুচিমত একটু ভর্তা-ভাত দেন। তবুও তারা আমাদের কথা শোনেনি। সকালে একটা করে রুটি আর ডাল দিতো, ওই খাবার খেয়ে সারাদিন থেকেছি।
শনিবার হজ পালন শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে কথাগুলো বলছিলেন ক্যাডেট কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনিস ফিরোজা।
দিনাজপুর থেকে হজে যাওয়া এই হাজি আরো বলেন, আপনারা সাংবাদিক। সবাইকে বলবেন সরকারিভাবে যেন কেউ হজে না যায়। আমরা যখন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি তখন তারা আমাদেরকে বলেছে, আপনারা তো কম টাকা দিয়ে হজে এসেছেন। কিন্তু আমরা মিনা, মুজদালিফা এবং আরাফায় থাকা খাওয়ার জন্য তিন দিনে প্রত্যেকে ২৭ হাজার করে টাকা দিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৪ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করতে সৌদি আরবে যান। একইভাবে পার্শ্ববর্তী ভারত এবং পাকিস্তান থেকেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যান অনেকে। কিন্তু পাকিস্তান অথবা ভারতের হাজিরা সৌদি আরবে যেমন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন তার ছিটেফোঁটাও পাননি বাংলাদেশিরা। এমনই দাবি করেছেন ভুক্তভোগী হাজিরা।
হজ থেকে ফিরে দিনাজপুর সদরের স্কুলশিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাশেই পাকিস্তান এবং ভারত থেকে আগত হাজিরা ছিলেন। তাদের থাকার পরিবেশ এবং খাওয়া অনেক ভালো ছিল। তাদেরকে দেখে আমরা অপমানবোধ করাতাম। লজ্জা পেতাম।
এদিকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়া এই হাজিরা যে শুধু খাওয়ার কষ্ট পেয়েছেন এমন নয়। তাদেরকে থাকা, চিকিৎসা এবং পরিবহনসুবিধাসহ যেসকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা ছিলো সেখানেও তারা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
হজ পালন করে দেশে ফিরে দিনাজপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোকারম হোসেন বলেন, আরাফা থেকে মুজদালিফা যাওয়ার সময় আমাদের গাড়ি দেয়ার কথা ছিলো, কিন্তু দেয়নি। রাত ১/২ টার সময় তিন ঘণ্টার পথ হেঁটে গেছি। খাবার দিয়েছে সেদ্ধ করা মাংস, পাতলা ডাল আর ভাত। আর থাকার জন্য প্রত্যেকের এক ফুট জায়গা ছিলো। একটা রুমে ১২০ জনকে গাদাগাদি করে রেখেছিল। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে সরকারিভাবে কেউ যাতে হজে না যান, সেজন্যই এমন করা হয়েছে।
অন্য আরেক হাজি মাদরাসার অধ্যক্ষ আজিজুল হক বলেন, আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ আরো ভালো হওয়া দরকার ছিলো। সরকারিভাবে মাত্র সাড়ে তিন/চার হাজার মানুষ হজে যান। কিন্তু তাদের ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করা হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসাসেবা পেতে খুবই সমস্যা হয়েছে। প্রথম ১৫ দিন অসুস্থ হয়েও কেউ ওষুধ পাননি। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ওষুধ এসেছে কিন্তু সৌদি ডাক্তাররা ইনভেস্টিগেশন না করা পর্যন্ত পাওয়া যাবে না। আবার ডাক্তার থাকতেন আলাদা স্থানে। এতে বয়স্ক হাজিরা ডাক্তারদের খুঁজেই পেতেন না।