বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গানের এ্যালবাম প্রকাশ করা হলো না শিল্পী আব্দুল জব্বারের
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানের একটি এ্যালবাম প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার। তবে এর আগেই তাকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর এ শিল্পী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গানের এ্যালবামটি শিগগিরই প্রকাশ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন প্রতিশ্রুতিশীল গীতিকার আমিরুল ইসলামের কাছে। এ জন্য শিল্পী তাকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কয়েকটি গান লেখার পরামর্শও দিয়েছিলেন বলে জানান।
এইচ আর মেমোরিয়াল কলেজের (খিলগাঁও) ইংরেজীর প্রভাষক এ গীতিকার বাসস’কে জানান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার লেখা ‘বাংলাদেশের হৃদয় তুমি, তুমি বাংলার মিতা, আমরা সবাই একটি জাতি তুমি জাতির পিতা..’ গানটিতে শিল্পী আব্দুল জব্বার কণ্ঠ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা এ গানটি তার বেশ পছন্দ হওয়ায় তিনি জাতির পিতাকে নিয়ে আরো কয়েকটি গান লেখার পরামর্শ তাকে দেন। তিনি বলেন, শিল্পীর পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লেখা শুরু করি এবং ‘বঙ্গবন্ধু দেখেছি তোমায় দেখেছি মুক্তিযুদ্ধ, হায়েনাদের তুমি তাড়িয়ে দিয়ে করেছ মাটিশুদ্ধ..’ গানটি লিখি। এ গানটিতেও শিল্পীর গত মে মাসে কণ্ঠ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থাবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে শিল্পী তাকে একাধিকবার বলেছেন- ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরো কয়েকটি গান লিখ, আমি শুধু তাকে নিয়ে লেখা গানের একটি এ্যালবাম করতে চাই’। শিল্পী তাকে আরো বলতেন- ‘দেখ আমিরুল, আমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাব এবং বাবাকে নিয়ে লেখা তোমার দ্বিতীয় গানটি আমি গাইবো এবং তোমার লেখা গান দিয়ে বাবার এ্যালবামও আমি করে যাব’। কিন্তু মৃত্যুর অমোঘ নিয়মের কাছে হেরে যাওয়ায় তার সে আশা অপূরণই রয়ে গেলো বলে তিনি জানান।
শিল্পী সব সময়ই বঙ্গবন্ধুকে ‘বাবা’ বলে ডাকতেন উল্লেখ করে এ গীতিকার বলেন, ভরাট কণ্ঠের অধিকারী এ শিল্পী বঙ্গবন্ধুকে যে কতটা ভালোবাসতেন, তার সঙ্গে না মিশলে তা জানতেই পারতাম না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি যতবার কথা বলতেন ততবারই ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করতেন। ইংরেজির এ প্রভাষক আরো বলেন, কিংবদন্তি এ শিল্পী এক সময় বেশ আর্থিক অনটনে পড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তখন কারো কাছে হাত পাতেননি। কারণ তার আত্ম মর্যাদাবোধ এতটাই প্রখর ছিল যে, পরিবার নিয়ে কষ্ট করেছেন, তারপরও তার অনটনের কথা কাউকে জানতে দেননি। তিনি বলেন, কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীক্ষè নজর সব দিকে থাকে বলেই তিনি শিল্পীর অভাব-অনটনের কথা জেনে যান। আর জানার পরপরই তিনি বছর ২ আগে শিল্পীকে ২০ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী তাকে একটি গাড়িও উপহার দেন বলে তিনি জানান। এ শিল্পী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এসব পাওয়ার অধিকার রাখেন বলেও তিনি মনে করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি আবদুল জব্বারের অনুরাগের কথা উল্লেখ করে শিল্পীর বড় ছেলে মিথুন জব্বার জানান, বাবা আমাকে প্রায়ই বলতেন- ‘আমি বাবাকে (বঙ্গবন্ধু) হারিয়েছি, তবে আজও আমি বাবাকে নিজের মনের মধ্যে ধরে রেখেছি’। বাবা বলতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই বোঝাতেন উল্লেখ করে মিথুন বলেন, সেই বাবাকে নিয়ে আমার বাবা একটি একক এ্যালবাম করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। তবে জীবদ্দশায় তিনি সব সময়ই বঙ্গবন্ধুকে গানে গানে স্মরণ করতেন।
দীর্ঘ ৫০ বছরের সঙ্গীত জীবনে আব্দুল জব্বারের মতো এতো গুণী একজন শিল্পীর মাত্র একটি মৌলিক এ্যালবাম রয়েছে উল্লেখ করে গীতিকার আমিরুল বলেন, তার মধ্যে কোন কমার্শিয়াল চিন্তাই ছিল না বলেই এমনটি ঘটেছে। এমনকি যখন তার বেশ অভাব-অনটন তখনো অর্থের প্রতি তার কোন মোহ দেখিনি। তিনি বলেন, শিল্পীর একমাত্র মৌলিক এ্যালবামটির নাম ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’। এ বছরের শুরুতে প্রকাশ পায়। এ্যালবামটির সব ক’টি গান তার লেখা উল্লেখ করে গীতিকার বলেন, এ্যালবামটি প্রকাশের পরই শিল্পী তাকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লেখার পরামর্শ দেন এবং বঙ্গবন্ধুর উপর একটি এ্যালবাম প্রকাশের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।