চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ নদীতে ভাসমান সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন সহিদ তালুকদার
জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোভান গ্রামের সহিদ তালুকদার (৪৬) নদীর কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেডে ফরমালিন মুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছিলেন। আজ তা পুরো জেলার মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
ভরা মৌসুমে চাঁদপুর জেলা ছাড়াও আশেপাশের অনেক জেলা থেকেও কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষাণার্থী ও চাষিরা তার ভাসমান সবজি চাষ পরিদর্শন করতে আসেন।
জানা গেছে, শোভান গ্রামে গত বিশ বছর পূর্বে বরিশাল এলাকা থেকে আসা জনৈক চারা বিক্রেতার হাতে ভাসমান বেডে তৈরি একটি চারা দেখে আগ্রহ সৃষ্টি হয় সহিদ তালুকদারের। কিন্তু ওই চারা বিক্রেতার একটি চারা দেখতে গিয়ে তিনি তা নষ্ট করে ফেলেন। ফলে তাকে অর্থদন্ড দিতে হয়।
এর কারণে তার জেদ চাপে নিজের এলাকাতেই তিনি ভাসমান বেড তেরি করে তাতে সবজির আবাদ করবেন। শোভান গ্রামের পাশের ডাকাতিয়া নদীর তীরে শুরু করেন ভাসমান বেড তেরি। কচুরিপানা দিয়ে তেরি এসব বেডের সবজি চাষের পাশাপাশি কচুরিপানার অংশ পরবর্তীতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় ফসলি জমিতে।
সহিদ তালুকদার জানান, ভাসমান বেডে লাউ, কুমড়া, লালশাকসহ ১৫/১৬ জাতের সবজি চাষ করা সম্ভব। বছরের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয় এই বেড তৈরি যা শেষ হয় জানুয়ারি মাসে।
তিনি আরো জানান , আমি এ বছর ৫০টি ভাসমান বেড তৈরি করেছি। এতে আমার খরচ পড়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ থেকে আমি প্রায় ৬ লাখ টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করছি।
গত বিশ বছরে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন সহিদ তালুকদার। এই আয় দিয়ে তিনি তার ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে পড়াচ্ছেন। বড় ছেলে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, ছোট ছেলে এইচএসসি পরিক্ষার্থী এবং একমাত্র মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি এখন খুব ভালো ভাবে জীবন যাপন করছেন বলে জানান।
তিনি জানান, কচুরিপানা ফেলনা নয়, তা তিনি সকলকে দেখিয়েছেন। ফলে প্রতিনিয়ত এর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বেকার যুবকদের।
কৃষক বাবুল হোসেন জানান, সহিদ ভাইকে দেখে আমি গত ১৫ বছর থেকেই কচুরিপানাকে কাজে লাগিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে ফসল আবাদ করছি।
কৃষক ইব্রাহিম তালুকদার বলেন, এক শতাংশ পরিমাণ জমির ধাপ তৈরি করতে আমাদের প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর আয় হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি শতক বেডে থেকে লাভ থাকে ৪ হাজার টাকা। সহিদ ভাইকে এই কাজ করতে দেখে আমরা তার সাফল্যে আমাদের অনেক বেকার যুবককে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এই পেশায় আসতে, এখন আমাদের কোন পিচু টান নেই।
টুবগি গ্রামের কৃষক শামিম জানান, পানিতে ভাসমান এবং কচুরিপানার উপর এ পদ্ধতির সবজির আবাদ হওয়ায় রাসায়নিক সারসহ কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদিত সবজির উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। এ সবজি থাকে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও নিরাপদ।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই ফরিদগঞ্জ ভাসমান ধাপে সবজি ও মসলা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান সবজি চাষ একটি চমৎকার সমাধান বলে জানান তিনি।