রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান স্পিকারের
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্থায়ী ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও এ্যাডভাইজরি কমিটি অন রাখাইন স্টেটের চেয়ারম্যান কফি আনানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ড. আনান অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ এবং রাখাইন প্রদেশের উপদ্রুত এলাকাগুলোতে জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তা সংস্থাসমূহ এবং গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। এসব পদেক্ষেপের আশু বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাখাইন প্রদেশে এখন পর্যন্ত অবস্থানরত দুর্গত মানুষের মধ্যে আস্থার মনোভাব তৈরি করা সম্ভব বলে মতপ্রকাশ করেন কফি আনান।
কফি আনান চলমান পরিস্থিতিতে মানবিক ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেন। তিনি মিয়ানমারের অব্যাহত অনুপ্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এখন পর্যন্ত সঙ্কট চলমান থাকার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন।
স্পিকার ড. আনানকে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর ধারনা ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি ড. আনানকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণের আলোকে দ্রুত সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের অনুরোধ জানান। ড. আনান চলমান মানবিক বিপর্যয় কালে তার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এদিকে সোমবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইকোসক চেম্বারে ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ও বাংলাদেশের মানবিক সহযোগিতা বিষয়ে’ জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়কারী এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক্ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জন্য এক ব্রিফিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে মার্ক লোকক্ কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শনকালে তাঁর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
জোরপূর্বক বাস্তÍুচ্যুত এসব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে উদারভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান মার্ক লোকক্। উদ্বাস্তু ক্যাম্পসমূহে জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো গৃহীত বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ও অন্যন্য সহায়তা প্রদানের সংক্ষিপ্তসারও তুলে ধরেন লোকক্্।
তিনি এক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনার কথা, রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘ প্রদত্ত মানবিক সহায়তা, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে প্রাপ্ত সহায়তার কথা সদস্যরাষ্ট্রসমূহকে অবহিত করেন এবং তিনি এ প্রসঙ্গে ২৩ অক্টোবর জেনেভাতে অনুষ্ঠেয় প্লেজিং কনফারেন্সের কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাদবাকী সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই মানবিক আশ্রয়দানে অনন্য সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন। অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।’
স্পিকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অমানবিক অবস্থার বর্ণনা দেন।
স্পিকার বলেন, ‘আমরা এই সমস্যার জরুরী সমাধান চাই যাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিরাপদভাবে এবং সম্মানের সাথে তাদের ঘরে ফিরতে পারে এবং প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অর্থপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে। এই সংকটের শিকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার পরিস্থিতির সমাধানে যে ৫টি পদক্ষেপের কথা বলেছেন স্পিকার তাঁর বক্তৃতায় সেগুলো উল্লেখ করে বলেন, ‘সহিংসতা ও একটি জাতিকে নির্মূলের প্রক্রিয়া বন্ধ, মিয়ানমারে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফান্ডিং মিশন প্রেরণ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেফ জোন তৈরি, জোরপূর্বক উচ্ছেদকৃত মানুষদের নিজ ভূমিতে স্থায়ী প্রত্যাবর্তন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।’
এই ব্রিফিং অনুষ্ঠানে ইউএনএইচসিআর, আইওএম, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, রেডক্রস এন্ড রেডক্রিসেন্ট এর প্রতিনিধিগণ ছাড়াও কুয়েত, তুরস্ক, সৌদিআরব, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ইইউ’র রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন।
আজ স্পিকারের জাতিসংঘ মহাসচিব ও ইউএন উইমেন এর নির্বাহী পরিচালকের সাথে সাক্ষাতের কর্মসূচি রয়েছে।