আগামী নির্বাচনে ইভিএম প্রবর্তনসহ ১১-দফা সুপারিশ আওয়ামী লীগের
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রবর্তনসহ ১১ দফা সুপারিশ করেছে আওয়ামী লীগ।
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে এ সুপারিশগুলো উপস্থাপন করে।
সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমানে বিরাজমান সকল বিধিবিধানের সাথে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমুহের ন্যায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইভিএম’-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ ব্যাবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১১টি সুপারিশ কমিশনের সামনে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি বা নির্বাচনকালীন তাদের নিয়োগের বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, তা দেশের বিরাজমান আইন ও সাংবিধানিক নিয়ম কানুনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে, ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌজদারী কার্যবিধি ১২৯-১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালায় ‘বেসামরিক বাহিনীর সহায়তা’ (ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার) শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ রয়েছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি জনসংখ্যার বিশেষ করে আদমশুমারির সাথে সম্পর্কিত উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির ওপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আদমশুমারী ব্যতীত পুনরায় এই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম গ্রহণে বিভিন্ন আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমতাবস্থায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের মতো একটি জটিল কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যেসব আইনানুগ পদক্ষেপ গৃহীত হয়ে থাকে, তথা খসড়া থেকে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত যে মহা কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয়, তা সময় স্বল্পতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক। ইসির সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অনেক স্থানীয় নির্বাচন রয়েছে। সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ ইসিকে অনুরোধ করছে।
সকল প্রার্থীর এজেন্টদের তালিকা ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ (কেন্দ্র ভিত্তিক) নির্বাচনের পূর্বেই রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কাছে দাখিল করা এবং তাদের পরিচয় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক নিশ্চিকরণের পর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ এবং ভোট শেষ না হওয়ার পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনোভাবেই যেন কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির আনুগত্যশীল কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে এ দায়িত্ব দেয়া না হয় এবং নির্বাচনে দিন গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কার্যকর নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করে গণমাধ্যমকর্মীদের উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান ও তাদের দায়িত্ব কর্ম এলাকা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
তিনি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের বাংলা সংস্করণ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করায় কমিশনকে দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশীশক্তি রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি বা সংস্থার অপেশাদার ও দায়িত্বহীন আচরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারিদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ এবং তৃণমূলের কর্মীদের মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন চুড়ান্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপের শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে সিইসি বলেন, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির প্রসার অবকাঠানোর উন্নয়ন এবং প্রকৃতি সংরক্ষণে আজ ধরিত্রীর বিশ্ব মুকুট শেখ হাসিনার মাথায়।
তিনি বলেন, এই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে এবং বেশ কয়েকজনের রায়ও কার্যকর করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছে। আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে বা উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।
সিইসি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা কূটনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ বিশ্বমাতৃকার আসন অলংকৃত করেছেন। নির্বাচন কমিশন যে সকল আইন ও বিধি বিধানে পরিচালিত হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা। বিশ্বের বহু দেশের নির্বাচন কমিশনের চেয়ে এ দেশের কমিশন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে। যা আওয়ামী লীগ সরকার প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ ও অনুপ্রেরণায় সেদিনকার আমরা তরুণরা বুকে গ্রেনেড নিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। ঐতিহাসিক আন্দোলনের মুকুট সবগুলো এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে।’
কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।