রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রেজুলেশন গ্রহণের আহবান সিপিএভুক্ত দেশের সংসদ সদস্যদের
রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশন (সিপিএ) ৬৩তম সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে একটি রেজুলেশন গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন সিপিএ’র সদস্যভুক্ত দেশের সংসদ সদস্যরা।
তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত সাধারণ অধিবেশনে একটি রেজুলেশন গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, যাতে মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়।
আগামী ৭ নভেম্বর এই সাধারণ অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ৬৩তম সিপিএ সম্মেলনে মিডিয়া কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এমপি। সিপিএ সম্মেলন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এ সময় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, পঙ্কজ দেবনাথ, তানভীর ইমাম ও ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বাংলাদেশে বিরাজমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে সিপিএ’র সদস্যভুক্ত দেশের সংসদ সদস্যদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ সময় সিপিএ চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সিপিএ মহাসচিব আকবর খান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, তাদের নাগরিক পরিস্থিতি, মানবিক কারণে বাংলাদেশে তাদের আশ্রয়, চিকিৎসা, খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমের বর্ণনা দেন।
পরে বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা এ বিষয়টির দ্রুত সমাধানে তাদের সুপারিশ, প্রস্তাব ও বক্তব্য তুলে ধরেন। পাশাপাশি তারা তাদের দেশের অবস্থান তুলে ধরে বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বিভিন্ন প্রস্তাবের জবাব দেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে নারী, শিশু ও বয়স্ক নাগরিক। যাদের নিজ বাস্তুভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এদের বাংলাদেশ আশ্রয় ও মানবিক সকল সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখের অধিক রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরো ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখের অধিক মিয়ানমারের নাগরিক এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া ও তাদের স্বজনদের হত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতনের কারণে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে কাজী নাবিল আহামেদ জানান, ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণকারী সংসদ সদস্যদের অনেকেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর তাদের দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনকে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করে এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।
তারা মানবিক সহায়তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ সরকার ও দেশের জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সিপিএ সদস্যভুক্ত দেশের সংসদ সদস্যদের আহবান জানিয়েছেন, তারা যেন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জাতীয়, প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা করে তাদের দেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। যেন মিয়ানমার তাদের নিজেদের নাগরিকদের পূর্ণ মর্যাদায় ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্ব প্রদান করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী নাবিল বলেন, বাংলাদেশের মতো সিপিএ সদস্যভূক্ত দেশের সদস্যরাও মনে করে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি করেছে, অতএব তাদেরই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী ৭ নভেম্বর সিপিএ সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সিপিএ’র নিয়মানুযায়ী সদস্যভূক্ত দেশের সংসদ সদস্যদের প্রস্তাবগুলো নিয়ে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করা হতে পারে।