বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে নাটক ‘মুজিব মানেই মুক্তি’ মঞ্চস্থ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর নাটক ‘মুজিব মানেই মুক্তি’ মঞ্চস্থ করা হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।
নাট্যব্যক্তিত্বও শিল্পী লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর মহান সংগ্রামী জীবনভিত্তিক ঐতিহাসিক এই নাট্যপোখ্যান গতকাল রাতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রদশর্নী অনুষ্ঠিত হয়। লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী) নাটকটি প্রযোজনা করেছে।
নাটকের প্রদশর্নী শেষে নাট্যব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ অভিনেতা ড. ইনামুল হক তার ভাষণে বলেন, বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ মহানায়ক কিভাবে গড়ে উঠেছেন, নাটকে তা তুলে ধরা হয়েছে। লিয়াকত লাকীর ব্যাতিক্রমধর্মী সৃষ্টি এই নাটক নতুন প্রজন্ম শুধু নয়, সব বয়সের মানুষেরই উপভোগ করার জন্য উপযোগী। ঐতিহাসিক নাটক লেখা ও মঞ্চে উপস্থাপন অত্যন্ত কঠিন বিষয়। আর সেটা যদি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হয়, তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই অসাধ্যকে সৃষ্টিশীল করে তোলা হয়েছে এ নাটকে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও আন্দোলন সঙ্গীত ও সাংকেতিকধারায় নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি নাটকের আয়োজক ও প্রযোজনা সংস্থাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই নাটক বাংলা নাটকের ইতিহাসে অনন্য আসন করে নিয়েছে।
নাটকের শুরুতে দেখা যায়, কিশোর মুজিব সকল ধর্মের ও গোত্রের ছেলেমেয়েদের সাথে গান, বাজনা, খেলাধুলা, কৃষক সমাজের সাথে ও সংস্কৃতি অঙ্গনে অন্যদের সাথে নিয়ে নানা ধরণের কাজে সময় কাটান। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে নিজের জীবনকে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পরিশীলিতভাবে গড়ে তুলছেন। ছাত্রাবস্থা, রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন, সংগ্রামে লিপ্ত থাকার ইতিহাস ওঠে এসেছে। জাতির জনকের শৈশব, কৈশোর, যৌবন, সংগ্রামী জীবন ও তাঁর মহাপ্রয়াণ ক্রমান্বয়ে নাটকে সন্নিবেশিত হয়েছে। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের হিং¯্র চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। আবহমান বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, শোষণ, বঞ্চনা, দ্রোহ ও মুক্তির স্বপ্ন বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি সংগ্রাম ও তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং একাত্তরে তাঁর নেতৃত্বে নয়মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অজর্নের বিষয়ই নাটকটির মূল উপজীব্য হয়েছে।
প্রতীকধর্মী নাটকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় প্রতিটি স্তরে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামে অংশগ্রহণের বিষয়গুলো অভিনেতারা নিখুঁতভাবে গান ও শারিরিক কসরতের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এতে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের প্রায় পনেরটি গান সংযোজিত হয়েছে। গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো, বাংলা-বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, ও আমার বাংলা মাগো, তোমার আমার ঠিকানা, ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি, তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল, বাংলার মজদুর বাংলার কিষান, মানুষ ভজলে।
নাটকে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন জিয়াউদ্দিন শিপন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন, নাবিল আহেমদ, টই টই হিলালী, প্রিয়াংকা বিশ্বাস মেঘলা, মিজানুর রহমান, মূসা রুবেল, রাসেল রানা রাজু, তাজুল ইসলাম, হাবিব তাড়াসী, সুজন মাহবুব, শাহ আলম সরকার, আজেমরী এলাহি নিতি, শিল্পী এলাহী, রুমা, প্রিয়তী প্রমুখ। শব্দ প্রক্ষেপন ও আলো সংযোজনে শাহরিয়ার কামাল, মাসুদ কামাল ও বজলুর রহমান।
ইউনিভার্সেল থিয়েটার আয়োজিত সাত দিনব্যাপী ইতিহাসভিত্তিক ‘ইতিহাসের মহানায়কেরা’ শীর্ষক নাট্যোৎসবের অংশ হিসেবে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিসহ দুটি বেসরকারী ব্যাংক উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে।