ইতালির গর্বিত বিশ্বকাপ রেকর্ড হুমকির মুখে
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে এখন বাছাইপর্বের বাঁধা উতরে কয়েকটি দেশের সামনে শেষ সুযোগ অপেক্ষা করছে। এই দলে ইতালির মত ফুটবল পাগল জাতিও রয়েছে। অন্য দেশের জন্য তা মানানসই হলেও ইতালির বিশ্বকাপ রেকর্ডের সাথে এই পর্যায়টি একেবারেই যায়না। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে আগামী সাতদিন চলবে এই প্লে-অফ ম্যাচের পর্ব, যেখান থেকে রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করতে পারবে আর মাত্র ৯টি দল।
এর মধ্যে চারটি স্থান রয়েছে ইউরোপের জন্য বরাদ্দ। এই চারটি স্থানের জন্য ইউরোপীয়ান বাছাইপর্বের নয়টি গ্রুপের আটটি সেরা রানার্স-আপ দল হোম-এ্যাওয়ে ভিত্তিতে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করবে। অন্যাদিকে আফ্রিকার থেকে রাশিয়ার টিকিটি পাবে পাঁচটি দল। এর মধ্যে শেষ তিনটি স্থান এখনো বাকি রয়েছে। গ্রুপ পর্বের শেষ পর্বে যা নিশ্চিত হবে। ইতোমধ্যেই এই অঞ্চল থেকে নাইজেরিয়া ও মিশর রাশিয়ার টিকিট কেটে ফেলেছে। এছাড়াও আরো দুটি প্লে-অফ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড পেরুর ও অসেট্রলিয়া হন্ডুরাসের মুখোমুখি হবে।
ইউরোপে ইতালি, গ্রীস, সুইজারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে। প্রতিটি দলই দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি ঘরের মাঠে খেলবে।
ইতালি ও দলটির অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গিয়ানলুইগি বুফনের জন্য সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচটি বাড়তি কোন সুবিধা দিচ্ছে না। আজ্জুরিরা গ্রুপ পর্বে স্পেন ও মেসিডোনিয়ার সাথে ঘরের মাঠে ড্র করেছে। যে কারনে প্লে-অফ ম্যাচে খেলতে বাধ্য হয়েছে ইতালিয়ানরা। প্লে-অফ ম্যাচে খেলতে আসাটা ইতালির গর্বিত বিশ্বকাপ রেকর্ডকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে, একইসাথে হুমকির মুখেও ফেলেছে। ইউরোপীয়ান দেশ হিসেবে জার্মানীর পরেই সবচেয়ে বেশীবার বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইতালির। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি ১৯বারের মত বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে। ইতালির জন্য এই সংখ্যা ১৮। এর আগে জয়ী আটটি ইউরোপীয়ান দেশের মধ্যে ইতালি একমাত্র দল হিসেবে এখনো বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি।
সুইডিশদের বিপক্ষে বেশ সতর্কতার সাথেই মাঠে নামতে হবে ইতালিকে। বিশেষ করে ইতালিয়ান রক্ষনভাগকে বেশ সাবধান থাকতে হবে। প্লে-অফে খেলতে আসা আটটি দলের মধ্যে সুইডিশরাই সর্বোচ্চ গোল দেবার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। বাছাইপর্বে তারা ১০ ম্যাচে করেছে ২৬ গোল।
প্লে-অফের অপর ম্যাচে সুইজারল্যান্ড মোকাবেলা করবে নর্দান আয়ারল্যান্ডের। ১০টি গ্রুপ ম্যাচ থেকে সুইজারল্যান্ড ২৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। গ্রুপের অন্য দলগুলোর থেকে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের সাথে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে তাদের দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। নর্দান আয়ারল্যান্ডের ফরোয়ার্ড জেমি ওয়ার্ড বলেছেন, অবশ্যই তারা ভাল দল। সে কারনেই আমাদের থেকে চাপটা তাদের ওপরই বেশী। আন্ডারডগ হিসেবে আমরা সবসময়ই অসাধারণ। সে কারনেই আমি মনে করি এই ম্যাচে কিছুটা হলেও আমরা এগিয়ে রয়েছি।
গ্রীস ও ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের একটি বৈশিষ্ট্য হলো দুটি দলেরই প্লে-অফ ম্যাচে জয়ের অভিজ্ঞতা আছে। গ্রীস যদি জয়ী হয় তবে প্রথম ইউরোপীয়ান দল হিসেবে পরপর দুটি বিশ্বকাপে প্লে-অফে জয়ী হয়ে তারা খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এদিকে বড় টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত খেলা চারটি প্লে-অফ ম্যাচেই জয়ী হয়েছে ক্রোয়েশিয়া। লুকা মোদ্রিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মানজুকিচ, ইভান পেরিসিসের মত তারকাদের নিয়ে আশাবাদী হতেই পারে ক্রোয়েটরা। কিন্তু ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে গ্রীস হয়ে উঠতে পারে অপ্রতিরোধ্য।
আরেক ম্যাচে ডেনমার্কের প্রতিপক্ষ রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড। সব মিলিয়ে আটবারের মত প্লে-অফে খেলতে এসেছে আয়ারল্যান্ড যা একটি ইউরোপীয়ান রেকর্ড। শেষ চারটির মধ্যে তিনটিতেই জয়ী হয়েছিল আইরিশরা।
আফ্রিকায় নাইজেরিয়া ও মিশর রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করলেও আরো তিনটি স্থান এখনো বাকি রয়েছে। গ্রুপ-এ’তে তিউনিশিয়া নিজেদের স্থান প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। কঙ্গোর থেকে তারা তিন পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে। ঘরের মাঠে তাদের প্রতিপক্ষ লিবিয়া। এই ম্যাচে পরাজিত হলে এবং কঙ্গো যদি গিনিকে পরাজিত করে তবে তিউনিশিয়া চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।
অন্যদিকে গ্রুপ-সি’তে মরক্কো ও আবিজানের মধ্যে ম্যাচের ফলাফলের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। গ্রুপ-ডি’তে সেনেগাল দুই পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। সৌদি আরবের বিপক্ষে তারা হোম ও এ্যাওয়ে ম্যাচে মোকাবেলা করবে। এই দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট অর্জন করলেই রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত হবে।
রাশিয়ার সর্বশেষ দুটি স্থানে জন্য চারটি দল একে অপরের মুখোমুখি হবে। ওসেনিয়া গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া হন্ডুরাসের ও নিউজিল্যান্ড পেরুর মুখোমুখি হবে। দুটি ম্যাচেই নিজ নিজ দেশ থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দলগুলোকে খেলতে যেতে হবে।