চারণ কবি বিজয় সরকারের ৩২তম প্রয়াণ দিবস আজ
একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণ কবি বিজয় সরকারের ৩২তম প্রয়াণ দিবস আজ। এ উপলক্ষে নড়াইলে দুদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে জেলা শিল্পকলা একাডেফস প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায়। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। তাঁর (বিজয় সরকারের) বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। ভক্তবৃন্দ কবির প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এসব কর্মসূচি পালন হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামরুল আরিফ।
প্রয়াণ দিবস উদযাপন পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ৪ ডিসেম্বর ও পরেরদিন ৫ ডিসেম্বর দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে চিত্র প্রদর্শনী, বিজয়গীতি পরিবেশন, বিজয় সরকার পদক প্রদান, বিজয় সরকারের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা।
বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য আকরাম শাহীদ চুন্নু জানান, দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সফল করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে ভারতসহ দেশ-বিদেশের বরেণ্য কবি,সাহিত্যিক,গবেষক ও লোকজ সংষ্কৃতির পুরোধাগণ অংশগ্রহণ করবেন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক, চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তার প্রথম স্ত্রী বীণাপাণি দেবীর মৃত্যুর পর প্রমদা দেবীকে বিয়ে করেন তিনি। পরবর্তীতে প্রমদারও মৃত্যু হয়। দু’ছেলে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি ভারতে বসবাস করেন। তার শৈশবকাল এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রিয় জন্মভূমি ডুমদিসহ নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায়।ছেলেবেলা থেকেই তিনি (বিজয় সরকার) কবিতা, গান রচনা ও সূরের মধ্যে ডুবে থাকতেন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় তিনি আর বেশিদূর এগুতে পারেননি। মাত্র নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তার লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটে। মতান্তরে তিনি ম্যাট্রিক পাস। এরপর তিনি গানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার।পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ একদিন ভাবি নাই মনে…। এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনি ঠিক রবে/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে/ একদিন চলে যেতে হবে…। তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা’…এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন।
তিনি অনেক ইসলামী গান ও কবিতা রচনা করেন। কবিগানের আসরেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি।মাতিয়ে তুলতেন দর্শক-শ্রোতাদের। কোন কোন মঞ্চে তৎক্ষনাৎ নিজের রচিত আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য তিনি চারণকবি ও ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার তার মৃত্যুর হয়। সেখানেই তার শেষকৃর্ত্য সম্পন্ন করা হয়। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ চারণ কবি।