যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলকে তুরস্কের কড়া হুঁশিয়ারি
ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে দেশ দুটির বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান।
তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে তুরস্ক। এছাড়া ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা হবে মুসলিমদের জন্য ‘রেড লাইন’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই রেড লাইন পার না হওয়ার জন্য তাকে সতর্ক করেছেন তিনি।
জানা যায়, সম্প্রতি ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছেন। ইসরায়েলের বর্তমান রাজধানী তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের মাধ্যমে স্বীকৃতির বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি।
তবে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেরুজালেমের মর্যাদা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমঝোতার ওপর ভরসা করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে প্রথম দিনই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের নির্দেশ দেবেন। আর এর মাধ্যমে জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্প এমন নির্দেশ দিলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিপর্যস্ত হবে।
সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ টেলিফোনে ট্রাম্পকে বলেছেন, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে জেরুজালেমের মর্যাদার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ফিলিস্তিনি নেতাদের অনুরোধে মঙ্গলবার আরব লিগ জরুরি বৈঠকে বসেছে। জেরুজালেমের মর্যাদার বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে সেখানে।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কূটনৈতিক উপদেষ্টা হুমকি দিয়েছেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করবেন তারা।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে জেরুজালেমের মর্যাদা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। ১৯৬৭ সালে মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল এবং দাবি করে জেরুজালেমই তাদের রাজধানী। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা তা মানেনি এবং তাদের দাবি, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
জেরুজালেমে কোনো দেশের দূতাবাস নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী ও তাদের মালিকানাধীন শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবার সেই কাজ করতে যাচ্ছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ পড়ে যায়।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হোগান গিডলে বলেছেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে’ এমন ঘোষণা আসবে। প্রেসিডেন্ট এ পদক্ষেপের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ‘এটি যদির বিষয় নয়, কখন হচ্ছে সেটিই বিষয়। ’
তবে ট্রাম্পও তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে দেরি করছেন। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একটি আইন পাশ হয়, যাতে বলা হয়েছিল, ১৯৯৯ সালের মধ্যে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এ আইনে প্রেসিডেন্টকে প্রতি ছয় মাস অন্তর পর্যালোচনা করে সময় বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া আছে। ১৯৯৮ সাল থেকে সব প্রেসিডেন্টই তাই করেছেন। জুন মাসে ট্রাম্পও সময় বাড়িয়েছেন। কিন্তু চলতি ছয় মাস শেষ হচ্ছে সোমবার। এর আগেই তিনি দূতাবাস সরানোর নির্দেশ দিতে পারেন বলে কানাঘুষা চলছে।