যেসব কারণে জেরুজালেম মধ্যপ্রাচ্যে স্পর্শকাতর ইস্যু
পুরো বিশ্বের মতামতকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসেবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে স্বভাবতই ইসরায়েল সন্তুষ্ট হলেও ফিলিস্তিনিরাসহ পুরো আরব বিশ্বের নেতারা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকেই নস্যাৎ করবে বলে হুঁশিয়ারি করেছিল। এমনকী আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত “পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম এক উস্কানি। “
তবে কারও কথায় কান না দিয়ে বুধবার হোয়াইট হাউজে দেয়া এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেন। কিন্তু কেন জেরুজালেম মধ্যপ্রাচ্যে এত স্পর্শকাতর একটি ইস্যু?
বিবিসি বলছে, প্রাচীন এই শহরটি ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি বিরোধের একদম কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। শুধু এই শহরটি নিয়ে দশকের পর দশক ধরে থেকে থেকেই সহিংসতা হয়েছে, প্রচুর রক্তপাত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা ইয়োল্যান্ডে নিল-এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের অবস্থার যে কোনো পরিবর্তনের প্রভাব নানাবিধ এবং তা যে কোনো সময় আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে।
প্রথমত, ধর্মীয় দিক থেকে জেরুজালেম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি শহর। ইসলাম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনার অনেকগুলোই এই শহরে। এছাড়া, এর রাজনৈতিক গুরুত্ব হয়তো এখন ধর্মীয় গুরুত্বকেও ছাপিয়ে গেছে।
‘অভিন্ন জেরুজালেম তাদের চিরদিনের রাজধানী’ দীর্ঘদিন ধরে এমনই দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই ইসরায়েল জেরুজালেমের পশ্চিমাংশে দেশের সংসদ ভবন স্থাপন করে। আর ১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরবদের পরাজিত করে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমও দখল করে নেয় এবং পুরো জেরুজালেম শহরটিকে নিজেদের রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা বলছে, তারা কোনোদিনই ইসরায়েল কতৃক পূর্ব জেরুজালেমের দখল মেনে নেয়নি। তাদের দাবি, পূর্ব জেরুজালেম হবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।
এদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণায় ফিলিস্তিনি নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের বলছেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দিয়ে দেওয়া। তাদের কথা, জেরুজালেম তাদের না থাকলে, কোনো টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন কখনই সম্ভব হবে না।
বিবিসি বলছে, যদিও গত দশকগুলোতে পূর্ব জেরুজালেমের বহু জায়গায় ইহুদি বসতি বানিয়েছে, কিন্তু তারপরও এখানকার সিংহভাগ বাসিন্দা ফিলিস্তিনি যারা শত শত বছর ধরেই এই শহরে বসবাস করছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মেনে নিয়েছে, জেরুজালেম শহরের মর্যাদা, মালিকানা নির্ধারিত হবে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চূড়ান্ত শান্তি রফার অংশ হিসাবে। জাতিসংঘের প্রস্তাবে তা লিখিত আকারে রয়েছে।
ফলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হলেও তাদের দাবিকৃত জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে কোনো রাষ্ট্রই স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এতদিনের সেই নীতি ভাঙেছেন মার্কিণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।