চীন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে সক্ষম : রাষ্ট্রদূত
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, করোনাভাইরাস (এনসিওভি) এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের জন্য চীন সরকার পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী, সক্ষম, আন্তরিক এবং এর যথেষ্ট শক্তি রয়েছে, সুতরাং বিভ্রান্ত বা ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি আজ এখানে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এ লড়াইয়ে জয় লাভ করতে চীন সরকারের দৃঢ় প্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা রয়েছে। আমরা এ মহামারী মোকাবেলায় পুরোপুরি সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী।’
চীনা দূতাবাস এবং বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) যৌথভাবে নভেল করোনাভাইরাসকে নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করে।
নতুন করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসাবে অভিহিত করে লি জিমিং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের জন্য চীনের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের সমর্থন কামনা করেন।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং দেশে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা দিয়েছেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহানকে কেন্দ্র করে একটি সার্বিক এবং বহুস্তর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে।
তিনি বলেন যে চীন সরকার চীনা জনগণের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি প্রতিটি বিদেশী নাগরিক চীনের ব্যবস্থা এবং এর অতীত অভিজ্ঞতা, বিগত ৭০ বছরে গড়ে ওঠা শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ভিত্তির সুফল পাচ্ছে।
তিনি বাংলাদেশীদের চীনা পণ্য ব্যবহারে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান। কারণ এনসিওভি জিনিসপত্র ও সরঞ্জামের মাধ্যমে সঞ্চারিত হতে পারে না বরং এটি মানুষ থেকে মানুষে সঞ্চারিত হয়।
লি জিমিং বলেন যে করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের সাথে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে না।
তার পরেও যদি কোনও দেশ চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক থেকে সরে আসে তবে এটি বোকামিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে, তিনি যোগ করেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এর আগে দেশটি মারাত্মক শ্বসনতন্ত্র সিন্ড্রোম (এসএআরএস) ভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতিকে সাফল্যের সাথে এবং দ্রুত মোকাবেলা করেছে এবং এসএআরএস চীনা অর্থনীতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারেনি।
লি জিমিং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ আতঙ্কিত হবে না, শান্তভাবে এবং যৌক্তিকভাবে ঝুঁকিটি মূল্যায়ন করবে, ডাব্লুএইচওর মতো পেশাদার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করবে এবং অত্যধিক প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলবে এবং গুজবে কান দেবে না।
বিসিসিআইয়ের সভাপতি গাজী গোলাম মুর্তোজা বলেছেন, চীন সরকার দশ দিনের মধ্যে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করে ভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় তার দক্ষতা প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই এর মোকাবেলায় সকল দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তাই বিশ্ব সরবরাহ চেইন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে,।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বিসিসিআই সভাপতি বলেন, চীন গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। চীনের যে কোনো ঘটনা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটি চীনের সেসব প্রদেশ ও শহরে ছড়িয়ে পড়েনি, যেগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাই মহামারিটি বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারবে না।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষিতে দুই দেশ বাণিজ্য সম্পর্কের ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।
ব্রিফিংয়ে চীনের বাণিজ্যিক কাউন্সিলর ইমাবসি লিউ ঝেনহুয়া, বিসিসিসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মৃধা বেনু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।