বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Saturday, December 28, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » করোনা ইস্যুতে নতুন মাত্রায় চীন-মার্কিন বৈরিতা, ভাগ হতে পারে বিশ্ব ব্যবস্থা!

করোনা ইস্যুতে নতুন মাত্রায় চীন-মার্কিন বৈরিতা, ভাগ হতে পারে বিশ্ব ব্যবস্থা! 

114839_bangladesh_pratidin_fd

করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই টানাপোড়েন স্নায়ুযুদ্ধে রূপ নিলে বিশ্ব ব্যবস্থা ভাগ হয়ে যেতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের। দেশ দুটির সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েন এবং এর পরণতি নিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এমন আভাস দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, চীনা সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে রবিবার বেইজিংয়ে বিশেষ এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওয়াশিংটনের প্রতি স্পষ্ট করে কিছু বার্তা দিতে চেয়েছেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কভিড প্যানডেমিক নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ ছড়িয়ে মার্কিন কিছু রাজনীতিবিদ দুই দেশের মধ্যে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছেন যার ফল কারও জন্যই শুভ হবে না।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকাকে বদল করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা চীনের নেই। সুতরাং চীনকে বদলের অবাস্তব যে স্বপ্ন আমেরিকা লালন করছে তা তাদের পরিহার করা উচিত।’

তিনি সাবধান করেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে দুই দেশের সহযোগিতার ফলে যে সুফল তৈরি হয়েছে, তা নষ্ট করলে তাতে আমেরিকার নিজের ক্ষতি তো হবেই, পুরো বিশ্বের স্থিতিশীলতা এবং সচ্ছলতা হুমকিতে পড়বে।’

চীনের কাছ থেকে এমন জোরালো বক্তব্য এমন সময় এলো যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সব দায় চীনের ওপর চাপানোর চেষ্টায় রাশ টানার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা পিটার নাবারো সম্প্রতি এক তত্ত্ব প্রচার করেছেন যে, ‘চীন করেনাভেইরাসে আক্রান্ত লাখ মানুষকে বিমানে উঠিয়ে সারা পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছে যাতে একটি প্যানডেমিক তৈরি হয়।’

এ কথায় প্রচণ্ড ক্ষেপে গেছে বেইজিং। অন্যদিকে শায়েস্তা করতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ছেদ করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি ট্রাম্প।

কয়েকদিন আগে ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারী আরও একবার প্রমাণ করেছে যে, পণ্য এবং সেবার জন্য চীনের ওপর থেকে সব ধরনের নির্ভরতার ইতি টানতেই হবে।’

নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ সময় চীনকে কোণঠাসা করে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের চেষ্টা কি শুধুই ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তার কিছু সহযোগীর কাজ?

অধিকাংশ পর্যবেক্ষক অবশ্য তা মনে করেন না। তাদের কথা, বেশ আগে থেকেই বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বৈরিতা দিনে দিনে বাড়ছে। করোনাভাইরাস মহামারী তাতে শুধু নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে।

বেইজিংভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর চায়না অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং হুহাইওর মতে, ১৯৭৯ সালে দুই দেশের মধ্যে পুরোমাত্রায় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর পারস্পরিক অবিশ্বাস এত খারাপ কখনো হয়নি।

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, অনেকদিন ধরেই চীনকে আমেরিকা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতি প্রধান হুমকি হিসাবে বিবেচনা করছে।

ড. আলী মনে করেন, এটি শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নয়, সুযোগ পেলেই চীনকে ঘায়েল করার বিষয়ে আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐক্যমত্য রয়েছে।

উৎকণ্ঠায় চীন

ড. আলী বলেন, চীনের প্রতি বৈরিতা আমেরিকা শুধু নথিপত্রের ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে বেশ কিছুদিন ধরেই কার্যকরী করতে শুরু করেছে। চীনের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সঙ্গে যেমন- ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম, সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশগুলোর সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করছে।

ডব্লিউটিও বা ডব্লিউএইচও’র মতো যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চীনের প্রভাব রয়েছে, যেগুলোর সুবিধা চীন নিচ্ছে সেগুলোকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে সতর্ক করা হয়েছে যে, চীনের প্রতি যে বৈরি মনোভাব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এখন তৈরি হয়েছে, তার নজির ১৯৮৯তে তিয়েনানমেন স্কয়ারের ঘটনার পর দেখা যায়নি।

ভাগ হয়ে যেতে পারে বিশ্ব ব্যবস্থা

অবশ্য অদূর ভবিষ্যতে দুই পরাশক্তির মধ্যে সামরিক সংঘাতের কথা কেউ এখনো বলছেন না। বেইজিংয়ে চায়না অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের ওয়াং হুইয়াও বলছেন, ‘সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা কম। কিন্তু মুক্ত বাণিজ্যের কারণে গত কয়েক দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা হয়তো দেখবো পুরো বিশ্ব ব্যবস্থা দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।’

ড. আলীও অনেকটা তেমনই মনে করছেন। তার মতে, অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি খাতে বিশ্ব ব্যবস্থায় একটা বিভাজন হয়তো দেখা দিতে চলেছে যার একদিকে চীন এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বের কিছু দেশ হয়তো চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone