কাল থেকে খুলছে সবকিছু
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও আগামীকাল থেকে সীমিত পরিসরে সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, গণপরিবহন, লঞ্চ, ট্রেন, দোকানপাট, শপিং মল, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সীমিত আকারে চলবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। তবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান সাধারণ ছুটির আবরণে থাকা লকডাউনের আপাতত অবসান হচ্ছে ৬৬ দিন পর। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা আদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে লকডাউন তুলে দিয়ে সীমিত আকারে সব কিছু খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের পর গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল শুরু হয়েছে। গতকালও সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করেন। মানুষের এই যাত্রাপথে কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। রবিবার থেকে ট্রেন, লঞ্চ এবং সোমবার থেকে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস চালু করার প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বাস ও লঞ্চ মালিকরা। ১ জুন থেকে শুরু হবে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট।
বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় সেই ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে টানা ৬৬ দিনের এই ছুটি শেষ হচ্ছে আগামীকাল।
চলমান ছুটির মেয়াদ যে আপাতত আর বাড়ছে না- সেটা গত বুধবারই নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই দিন বিকালে সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়ে দেন। আর বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে জানানো হয়, ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত, দোকানপাট, শপিং মল, ব্যবসা বাণিজ্য, গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট চালুসহ সবকিছু চলবে। ব্যাংক পুরোপুরি খোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সব কিছুু খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে গণপরিবহন। গতকাল পরিবহন মালিক, শ্রমিক এবং ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে গাড়ি চালাতে হবে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আগামী সোমবার থেকে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল করবে।
এদিকে ট্রেন কবে থেকে এবং কীভাবে চলাচল করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে আজ শনিবার। দুপুরে রেলভবনে এ নিয়ে বৈঠক করবেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রবিবার থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের লাইনে সামাজিক দূরত্ব মেনে দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেনও সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে এবং অর্ধেক আসন খালি রেখেই চলাচল করবে। আজ বৈঠক শেষে রেলপথ মন্ত্রী এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ট্রেন চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। একইভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম যাত্রিবাহী লঞ্চ চলাচলের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসবে আজকালের মধ্যেই। ইতিমধ্যে বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নদীবন্দরে অবস্থান করা যাত্রীবাহী লঞ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে। সদরঘাটের ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, রবিবার থেকেই লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
চলবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সব স্বাস্থ্যবিধি ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুসরণ করে ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর রুটে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল করবে।