ড. রুবানা হক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি: বিজিএমইএ
বিজিএমইএ সভাপতি ডা. রুবানা হক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মেজর অব. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ মনে করে, বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়নি। সংগঠন হিসেবে এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার কোন সুযোগও নেই। বিজিএমইএ সভাপতি কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়া এবং সম্ভাব্য শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ে তার গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ ‘শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ে বিজিএমইএ’র বক্তব্যে বলা হয়- চলতি অর্থ-বছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই ২০১৯-এপ্রিল ২০২০) পোশাক শিল্পে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পোশাক শিল্পে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেও অধিক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে। পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারগুলো কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর কারনে অনেক বড় বড় ক্রেতা দেউলিয়াত্বও বরণ করেছে।
বিজিএমইএ বলেছে, চলমান পরিস্থিতিতে প্রকৃতপক্ষে, কোন কারখানাই সামর্থ্যের শতভাগ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছে, এমন ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। চলতি জুনে পোশাক কারখানাগুলো গড়ে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহার করে কোন রকমে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখছে। জুলাই পরিস্থিতি এখনই অনুমান করা কঠিন। তবে উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলো পোশাক শিল্পের জন্য আরও চ্যালেঞ্জময় হবে।
ম্যাকেঞ্জির তথ্য উল্লেখ্য করে বিজিএমইএ বলেছে, কোভিড-১৯ প্রভাবে ২০২০ সালে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিশ্বের পোশাক বাজারে বিক্রি ৩০ শতাংশ বা বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলার কমবে। চলমান পরিস্থিতিতে, উদ্যোক্তারা টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ এর সদস্যভুক্ত কারখানার মধ্যে ৩৪৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে শুধুমাত্র গত ২ মাসেই। বাকি আছে আর মাত্র ১ হাজার ৯২৬টি কারখানা। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাকি কারখানাগুলো হয় একে একে বন্ধ হয়ে যাবে অথবা কম ক্যাপাসিটি’তে (পূর্ণ সামর্থ্য ব্যবহার ছাড়াই) টিকে থাকার চেষ্টা করবে দিন বদলের আশায়। এটাই বর্তমান বিশ্বের রূঢ় বাস্তবতা।
বিজিএমইএ বলেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও কাজ ও শ্রমিক সংখ্যা বিপুলভাবে কমছে। আমরা শিল্প গড়ি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। আজকের এই বাস্তবতা আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্যও নির্মম। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ শর্ত ঋণের ৫ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস একাউন্টে দেয়া হচ্ছে। পোশাক খাত প্রতি মাসে মজুরি পরিশোধ করে থাকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার।
বিজিএমইএ বলেছে- সমস্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কারখানা বন্ধ বা সামর্থ্য কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে বিজিএমইএ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শুধুমাত্র পোশাকখাতই নয়, সকল খাতেই কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে।
বিজিএমইএ একান্তভাবে আশা করে, কোন কারখানা যদি উপরোক্ত পরিস্থিতির শিকার হয়ও, তথাপি মালিক ও শ্রমিক উভয়ই শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। উল্লেখিত প্রেক্ষাপটে শিল্পের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকের স্বার্থে বিজিএমইএ এর বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপিত এবং এ কঠিন সময়ে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে শিল্পের পাশে দাঁড়াবেন।