বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » সেই অস্ত্রধারী খুনিরাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগে সক্রিয়

সেই অস্ত্রধারী খুনিরাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগে সক্রিয় 

1266392121_n642618854_996721_9406

মোরশেদ ইকবাল, ঢাকা : চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে নিহত ঢাকা কলেজের মেধাবী ছাত্র ফারুকের খুনিরাই আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে তাদেরই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকার পর আবার বিভিন্ন হল, ক্যাম্পাস এবং কলেজের সামনের দোকানগুলোতে চাঁদাবাজিতে সরব হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের এসব খুনি।

সূত্র জানায়, খুনরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন। অন্যদিকে খুনের ঘটনায় বহিষ্কার ও কলেজ কমিটি স্থগিত করেই ক্ষান্ত রয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চিহ্নিত এসব খুনী। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে স্থবির হয়ে আছে বিচার প্রক্রিয়া। সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও নিয়মিত কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে লিয়াজু করছে ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী।

জানা যায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর গভীর রাতে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফুয়াদ হাসান পল্লব ও সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইমের গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এ ঘটনার পরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকা কলেজ কমিটি স্থগিত করে এবং দল থেকে ৭ নেতাকে বহিষ্কার করে।

কিন্তু ঘটনার প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হতে চললেও প্রশাসন বা ছাত্রলীগের পক্ষ আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সংঘর্ষের সময় ৩০/৪০ রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটলেও এ কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারেও নেই কোনো পদক্ষেপ।

ছাত্র হত্যার কয়েকদিন পর ঢাকা কলেজ সভাপতি ফুয়াদ হাসান পল্লব সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইমকে অভিযুক্ত করে এবং ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করেন। এর কয়েকদিন পরেই সিএমএম কোর্টে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে মামলা করেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পল্লব। দুটি মামলাই বর্তমানে নিউমার্কেট থানার অধীনে তদন্তাধীন। মামলা করা হলেও দুটি মামলার একটিতেও সভাপতি ও সেক্রেটারিকে উল্লেখ করা হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশেই পল্লব-সুইম একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। যেন কেন্দ্র থেকে বিষয়টির সমঝোতা করে দেওয়া যায়। দুটি মামলাতেই দেখা গেছে, ঘটনার মূল হোতা পল্লব-সুইম হলেও তারা কেউই আসামি নন। মামলা দায়ের করা পর্যন্তই উদ্যোগের সমাপ্তি ঘটে। এখন পর্যন্ত মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। আটক করা হয়নি কোনো ছাত্রলীগ খুনিকে।

জানা গেছে, সভাপতি ফুয়াদ হাসান পল্লব কলেজের সাউথ হলের ১১২ নম্বর রুমে এবং সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইম নর্থ হলের ১১২ নম্বর রুমে থাকেন। সংগঠন থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও তারা ক্যাম্পাসে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবজি করছেন। সুইমের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিংকু। তিনি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সুইমের অস্ত্রের ভা-ার বলে পরিচিত এই রিংকু। ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের যাবতীয় অস্ত্র রিংকুই সরবরাহ করে থাকে বলে জানা গেছে।

নিজেদের দ্বন্দ্বের জেরে ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে তারা দুজনেই একই বাইকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুরনো কমিটিকে আবার সক্রিয় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। কিছুদিন নীরব থাকার পর আবারো তারা ক্যাম্পাসের আশেপাশে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ ঘটনায় ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দল থেকে বহিষ্কার করলেও তারা আগের মতোই দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতাদের সঙ্গে একই মটরসাইকেলে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসব অস্ত্রধারীরা মামলা নিষ্পত্তির কথা বলে হলে হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধরও করা হচ্ছে। গত ২২ জানুয়ারি অনার্সে ভর্তি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা হয় কলেজ ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের কর্মীরা এ সময় কলেজের অধ্যক্ষের রুম তালা দিয়ে রাখে এবং তাকে লাঞ্ছিত করে। এতে ছাত্রলীগের এই দুই নেতা ওঁৎপ্রোতভাবে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফারুক হত্যাকা-ে জড়িতরা কলেজের আবাসিক হলে নিয়মিত থাকছেন। কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কলেজের বিভিন্ন স্থানে একই সঙ্গে আড্ডা দেয়। ছাত্রলীগের এসব অস্ত্রধারীদের হলে ফেরায় আবার সংঘর্ষের আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগকে বারবার ফোন করা হলেও তিরি রিসিভ করেননি।

তবে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আয়েশা বেগম বলেছেন, ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

নিউমার্কেট থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, গত দুই মাস আগের মামলা। এটা এখন ডিবিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের হাতে আর মামলার দায়িত্ব নেই।

তবে মামলা দায়েরের পরে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের কাউকে ধরতে পারিনি।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone