স্বাস্থ্য-সুরক্ষার দায়িত্ব এখন নিজের কাঁধে
করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত করতে যাচ্ছি। এ ছয় মাসে করোনা যেমনি বিশ্বব্যাপী ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সংক্রমণের হার। প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাস আলিঙ্গন করে মৃত্যুর পথযাত্রী হচ্ছে। করোনা মানুষের মনে মৃত্যু ভয়ের সঞ্চার করেছে- এ কথা যেমন সত্য, তেমনি কিছু মানুষের কাছে তা ক্ষুধার ভয়কে হার মানাতে পারেনি, সেটিও নির্মম সত্য। তাই তো মানুষ আজ জীবিকার টানে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছে, করোনার চেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা তাদের কাছে বড় বেশি নির্মম! সরকারও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে অনেক বিষয়ে নমনীয় সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি। তবে সারা বিশ্বে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞগণ কিন্তু এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, হয়তো করোনাকে সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যতে পথ চলতে হবে, এ পৃথিবীর মানুষকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, হেপাটাইটিস-বি, সি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রোটাভাইরাস, ডেঙ্গু এবং এইচআইভি ভাইরাস সবাই শুরুতে কমবেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। এসব ভাইরাস কিন্তু পৃথিবী থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি, এখনো রয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু অভ্যাস, কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এই রোগের প্রকোপ কমিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হয়তো করোনার ক্ষেত্রেও এমনটি হবে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আমাদের জীবনের অংশ করে নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেই। কবে তৈরি হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা কঠিন। রাত পোহালে যদি ভ্যাকসিন পেয়ে যেতাম, এমন আশাবাদ আছে অনেকের মধ্যে। বাস্তবে যত আশা করি না কেন, এটা তৈরি হয়ে দেশে আসতে সময় লাগবে। তাই প্রতিকার ও প্রতিরোধই এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার উপায়। তাই যেকোনো মূল্যে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন, আপনার এ স্বার্থপরতা অন্যকে সুরক্ষা দেবে। সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য সতর্কতাগুলো শুধু নিজের জন্য নয়; নিজের পরিবার, নিজের প্রতিবেশী, সর্বোপরি সব মানুষের জন্য মেনে চলতে হবে এবং এ স্বাস্থ্যবিধিগুলোকে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নিতে হবে। একটা বিষয় কিন্তু সবার কাছেই পরিষ্কার, আপনি আক্রান্ত হলে চিকিৎসা পাওয়াটা কঠিন। কারণ, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের জনসংখ্যা বা প্রয়োজন অনুপাতে হাসপাতাল, বেড, ভেন্টিলেটর, ডাক্তার ও নার্স নেই। টাকা থাকলেও সুচিকিৎসা পাওয়ার নিশ্চয়তা অনেক ক্ষেত্রে নেই। যত ক্ষমতাধর হোক, যত অর্থবিত্তের মালিক হোক কিংবা যত বড়ই বিজ্ঞানী হোক- কারও কিন্তু এই অদৃশ্য ভয়ঙ্কর দানব থেকে নিস্তার নেই। একমাত্র সতর্কতাই সব নাগরিককে সুরক্ষা দিতে পারে। করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি মুহূর্ত সতর্ক হতে হবে। যখন আমরা জীবিকার প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছি, কর্মস্থলে যাচ্ছি, তখন আমার সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সতর্কতা শুধু আমার নিজের জন্য নয়, আমাদের এক মুহূর্তের অসতর্কতার জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কেবল আমি করোনায় আক্রান্ত হব না, বরং আমার পরিবার, আমার কর্মস্থলের সহকর্মীরাও আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই আমাদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যদি আমরা ভালো থাকি তাহলে আমাদের পরিবার এবং সমাজ ভালো থাকবে। কাজেই আমার সুস্থ থাকা শুধু আমার জন্য নয়, আমার পরিবারের জন্যও বটে।