শেষ দিকে এসে জমজমাট বাণিজ্য মেলা
রোকন উদ্দিন, ঢাকা : ছুটির দিন মানেই জমজমাট বাণিজ্য মেলা। শুক্র ও শনিবার ছুটিরদিনগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমনে বেচাবিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও। এদিকে শেষ হওয়ার পথে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ১৯ তম আসর। আর বাকি ৯ দিন। শেষ সময়ের বিক্রির সঙ্গে তাল দিয়ে চলছে মূল্যছাড়ের হিড়িক। দিন যতই যাচ্ছে কেনাবেচা বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও বাড়ছে। এতে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হয়ে পছন্দের পণ্য কিনছেন।
শনিবার মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নে নগদ ক্রয়ের ওপর বিভিন্ন অঙ্কের ছাড়, নানা ধরনের উপহার, স্ক্র্যাচকার্ডে পণ্য জিতে নেওয়ার সুযোগ, প্যাকেজ অফারে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কেনাকাটা বেড়েছে। বেচা-বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি বিক্রেতারা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পণ্যের গুণগত মান ও দাম নিয়ে ক্রেতাদের রয়েছে নানা অভিযোগ। তবুও শেষদিকে মেলার স্টলে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বরাবরের মতোই গুণগত মানের তুলনায় দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে কম দামের কারণে বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, এখন ছুটির দিনে এক থেকে দেড় লাখ দর্শনার্থী আসছে। মেলার গতকাল ২২তম দিনে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সকাল থেকেই প্রচুর ক্রেতার উপস্থিতি ছিল। মেলার শুরুতে তেমন অফার না থাকলেও এখন বেশিরভাগ স্টলে অফার চলছে। ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের কৌশল হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন অঙ্কের ছাড়সহ নানা অফার। অনেক স্টলে দেখা গেছে, ‘আখেরি অফার’, ‘গোল্ডেন অফার’সহ নানা অফারে লেখা স্টিকার, ব্যানার ও ফেস্টুন। মেলা প্রাঙ্গণে রাঙামাটি থেকে আসা বৈশাবী হ্যান্ডিক্র্যাফট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রিপিসে দিচ্ছে ১০ শতাংশ ছাড়। গৃহস্থালী কাপড়ের ব্র্যান্ড হোমটেক্সের বিছানার চাদর, ঘরের পর্দা, লেপ-বালিশের কাভার, সোফাসেটের কাভারে দেওয়া হচ্ছে ৯ শতাংশ ছাড়। এশিয়ান স্কাইশপে পণ্যভেদে ছাড় দেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। শতরঞ্জিতে পাপস ও কার্পেট ১২০ টাকা, ১৫০ টাকা ও ৪০০ টাকা মূল্যের একটি পণ্য কিনলে একটি বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের ব্র্যান্ড কোকোলার প্যাভিলিয়নে তিনটি প্যাকেজ অফারে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এসব প্যাকেজের বিস্কুট কিনলে একশ’ টাকায় ১৩ টাকা, ২০০ টাকায় ৩৯ টাকা এবং ৩০০ টাকায় ৫২ থেকে ৬৮ টাকা পর্যন্ত ছাড়। জার্মান কসমেটিকসের স্টলে দুলগান, ফ্রুটিনি ও সেনসেশন ব্র্যান্ডের প্রসাধনীতে দেওয়া হচ্ছে ৩০ শতাংশ ছাড় এবং স্ক্র্যাচকার্ড ঘষে উপহার। এ ছাড়া বিদেশি প্যাভিলিয়নগুলোতে চলছে বিভিন্ন ধরনের ছাড়। ইরানি সব ধরনের মসলা কিনলে ২০০ টাকা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। শীত কমে যাওয়ায় ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। মেলার শুরুতে এসব বে¬জার ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। মিনা স্টলে পাটের ব্যাগে ৫০ টাকা ছাড়। ইলেকট্রনিক্সসহ অন্যান্য পণ্যে রয়েছে মূল্যছাড়।
প্যাভেলিয়নগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ফার্নিচার ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন প্যাভেলিয়নে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। ম্যাক্সিমাস টাচফোন মোবাইল সেট কিনে মালয়েশিয়া ভ্রমনের অফার দিয়েছে কোয়ারটেল ইনফোটেক লিমিটেড। বাণিজ্য মেলায় ১৪টি দৃষ্টি নন্দন মডেলের মোটরসাইকেল নিয়েছে এসেছে ডায়াং-রানার। এগুলোর মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে টার্বো-১৫০ সিসি, এলএমএল ফ্রিডম-১১০ সিসি, বুলেট-১৩৫ সিসি, রয়েল প্লাস-১০০ সিসি মডেলের মোটরসাইকেল। এছাড়া বাণিজ্য মেলার ইতিহাসে এবারই প্রথম ট্রাক নিয়ে এসেছে রানার। স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি আলেক খন্দকার জানান, বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে প্রতিটি মোটরসাইকেলে ৫ হাজার টাকা ছাড় অথবা রানারের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অটোগ্রাফসহ মোটরসাইকেল বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি জানান, মেলায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে ফ্রিডম রানারের আপকামিং মডেলের ১০০ সিসির মোটরসাইকের। এটি নারী এবং পুরুষ উভয়ই চালাতে পারবেন। এটির মাইলেজ লিটারে ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার।
ফার্নিচারের মধ্যে পার্টেক্স ফার্নিচারের কাঠের পণ্যে দেয়া হচ্ছে ১৮ শতাংশ এবং স্টিলের পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড়। এ প্যাভেলিয়নের আসবাবপত্রের ৯০ শতাংশই নতুন পণ্য বলে জানালেন প্যাভেলিয়ন ইনচার্জ অশোক কুমার। এছাড়া ফার্নিচারের মধ্যে হাতিল ডোরস এন্ড ফার্নিচার দিচ্ছে পাঁচ থেকে ২০ শতাংশ, আখতার ফার্নিচার ১৫ শতাংশ, নাদিয়া ফার্নিচার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং ব্রাদার্স ফার্নিচার দিচ্ছে পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এসব ছাড় উপভোগ করতে দর্শনার্থীরা স্টল ও প্যাভিলিয়নে ঢুকলেই পণ্য কিনে ফিরছেন। মেলা প্রাঙ্গণেও বেশিরভাগ দর্শনার্থীর হাতে বিভিন্ন পণ্যের ব্যাগ দেখা গেছে। কয়েকজন ক্রেতা জানান, প্রতি বছরের শেষদিকে মেলায় ছাড় বেশি থাকেথ এ কারণে এবার তারা দেরিতে এসেছেন। ছাড় উপভোগ করতে বাড়তি কেনাকাটাও করেছেন তারা।