সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই সামনে এল চীন-পাকিস্তানের পুরনো ষড়যন্ত্র
মহামারী করোনা দুর্যোগের মধ্যেই গত আট সপ্তাহ ধরে ভারত ও চীনের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সীমান্তে দুটি দেশই ছেড়ে কথা বলছে না একে অন্যকে, সীমান্তে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। গালওয়ানে ২০ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে ভারতের প্যাংগং লেকের পাড়ে হেলিপ্যাড তৈরি ও সেনা বাড়িয়েছে চীন। এ নিয়ে এবার প্যাংগং এলাকায় চীনের সৈন্যদের উপস্থিতি ঘিরে নতুন করে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই ভারতকে চাপে রেখে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পাকিস্তান পাশে রেখে চীনের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাসহ নানা তথ্য সামনে আনলো ভারতীয় মিডিয়া।
ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ এক প্রতিবেদনে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও গোয়েন্দা অজিত ডোভালের দেয়া সাত বছর আগের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, অজিত ডোভাল ২০১৩ সালেই ভারতকে চীনের বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি জানান, ‘চীন পাকিস্তান জোট হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করে আসছে। একই সঙ্গে ভারতকে অস্থিতিশীল করতে জঙ্গিদের মদদ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।’ ভারতের ইন্টলিজেন্স ব্যুরোর সাবেক এই প্রধান তথ্যবহুল বিশ্লেষনের মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে চীনের ক্রমাগত অপতৎপরতা তুলে ধরেছেন। তার দেয়া তথ্যানুসারে, ১৯৫৯ সালে কমিউনিস্ট চীনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা ১৪তম দালাই লামা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এবং সে বছরেই তিনি তিব্বত ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর থেকেই চীন ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি শুরু করে। তখন সীমান্তবর্তী গুরুত্ব এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করে চীন।
ডোভাল ২০১৩ সালে তৎকালীন ভারত সরকারকে এও জানিয়েছিল, চীনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতের বিরুদ্ধে খুবই সতর্ক ছিল। তারা ভারতকে অস্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করতো। এমনকি ১৯৬৬ সালে তিনশ’ নাগা জঙ্গিদের চীনের উহান রাজ্যে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয় চীনের গোয়েন্দারা। পরবর্তীতে তাদের বিপুল গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্রসহ ভারতে পাঠানো হয়। এমনকি ভারত সরকারকে অস্থিতিশীল রাখতে চীন ষড়যন্ত্র করছে এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়। তবে চীনের এত অপতৎপরতা সত্ত্বেও ভারত সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি, বরাবরই প্রত্যেকটি ঘটনা এড়িয়ে গেছে।
যেমন ২০১০ সালে ভারতের হাতে আটক এক জঙ্গির দেয়া স্বীকারোক্তিতেও চীনের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলে। এরপর ২০১৩ সালে পেমা শেরিং নামের চীনের এক গোয়েন্দাকে ভারতের হিমাচল প্রদেশ থেকে আটক করা হয়। যে কিনা দালাই লামার উপর নজর রাখতে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতো। এভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে চীনের গোয়েন্দারা রাজনৈতিক, সামরিক জোটসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে চালাতো। অজিত ডোভাল এও দাবি করেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে চীন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এরও সহযোগিতা নিয়েছে। তারা যৌথভাবে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকেও মদদ দেয়। সূত্র : জি নিউজ।