উপজেলা নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
প্রধান প্রতিবেদক : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এই নির্বাচনের ফল নিজেদের ঘরে তুলতে দলের হাইকমান্ড থেকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে। সেই সঙ্গে চলছে দলের একক প্রার্থী দেওয়া এবং শরিকদের কীভাবে ছাড় দেওয়া যায় তার বিশ্লেষণ।
তবে এত কিছুর পরেও উপজেলা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে দলটি। সেই সঙ্গে মামলার নামে হয়রানি করে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণাসহ সার্বিক ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতে পারে বলে সংশয় রয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
কমিশন মোট ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০২টি উপজেলায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ দুই দফায় দিনাজপুর জেলার মোট পাঁচটি উপজেলায় নির্বাচন হবে।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, ‘অবাধ নির্বাচন নিয়ে নেতা-কর্মীরা যথেষ্ট সন্দিহান। কারণ যেসব নেতা-কর্মী নির্বাচনে মাঠে নামবেন তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। এটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে বলে আমাদের ধারণা।’
লুৎফর সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘অজ্ঞাত নামে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো সবচেয়ে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ যে কাউকে যেকোনো সময়ে ধরে নিয়ে যেতে পারে পুলিশ। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপি সমর্থিতদের টার্গেট করে রেখেছে। তবে নির্বাচনের মাঠে পরিশ্রম করবেন এমন নেতা-কর্মীদের নামে থাকা মামলাগুলো হাইকোর্ট থেকে জামিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই মত প্রকাশ করেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুই দফায় কুড়িগ্রামে মোট ছয়টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কোনো প্রকার বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করলে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল জয় ছিনিয়ে আনবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জানতে চাইলে দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান বলেন, ‘যে হারে মামলা হচ্ছে সে হারে আমরা আইনি সমর্থন দিতে পারছি না। কারন আমাদের সীমবদ্ধতা আছে। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ঢাকায় যথেষ্ট আইনি সহায়তা দেয়া হলেও তৃনমূল পর্যায়ে তা একবারেই কম বলে স্বীকার করেন তিনি।’
সূত্রমতে, ইতোমধ্যেই উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী নির্ধারণসহ সামগ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে জেলা ইউনিটগুলোতে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে কড়া নির্দেশ রয়েছে। তবে সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত ওেয়ার দায়িত্ব ওই ইউনিট প্রধানদেরই হাতে রয়েছে।
প্রথম দু’দফায় চাপাইনবাগঞ্জে দুটি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। পরিস্থিতি বর্ননা করতে গিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মো: শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা শিবগঞ্জ-চাপাইনবাবগঞ্জ। এখানে নির্বাচন পরবর্তী প্রায় ৪৭ হাজার অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এছাড়া ৭ হাজার ৬৭২ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে। এসব মামলার টার্গেটে রয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের নামে রয়েছে এসব মামলা। এমন কোনো নেতা নেই, যার নামে একাধিক মামলা নেই।’
উপজেলা নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে এসব মামলা পুনরুজ্জীবিত হয়ে প্রচার প্রচারনাসহ সার্বিক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনের ঠিক আগে আগে হয়রানি স্বীকার হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এ্যাড. মোকাদ্দেস আলী বলেন, নির্বাচন নিয়ে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছে। বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া সময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।
দলের দু’জন উপদেষ্টা জানান, উপজেলা একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যেখানে কোনো দলই আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিতে পারবে না। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলে তারা সব বাধা ডিঙ্গিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবে। উপজেলা নির্বাচন ৫ বছর পরপর হয়। তাই এ নির্বাচনে না গেলে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে বিএনপি, যা পরে জাতীয় নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এজন্য শত বাধা উপেক্ষা করেই বিএনপি নির্বাচনের অংশ নিচ্ছে এবং ফল তাদের পক্ষেই আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
তবে নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সংশয় নিয়ে তৃনমূলের সমীক্ষাকে বাস্তব বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান । তিনি বলেন, ‘স্থানীয় এসব নির্বাচন গনতন্ত্রের ভিত রচনা করে। এজন্য এসব নির্বাচন সুষ্ঠু,পক্ষপাতমুলক ও অবাধ হওয়া গুরুত্বপূর্ন। সত্যিকার অর্থে অর্থবহ ও শান্তিপূর্ন করা সরকারের দায়িত্ব। বিরোধী পক্ষকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।’
জে. মাহবুব বলেন, ‘সরকার ৫ জানুয়ারির মতো উপজেলা নির্বাচনেও ১৯ দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এগোতে চাইছে। এজন্য নেতাকর্মীদের বেপরোয়াভাবে লাঞ্চিত করছে, মামলা দিচ্ছে, কারারুদ্ধ করছে, জামিন দিচ্ছে না। এসব বিষয়ে সরকারকে বিবচেনায় নিয়ে শান্তিপূর্ন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রস্তাবিত উপজেলা নির্বাচনের ৬টি তারিখ হল-প্রথম ধাপ-১৯ ফেব্রুয়ারী, দ্বিতীয় ধাপ-২৭ ফেব্রুয়ারী, তৃতীয় ধাপ-১৫ মার্চ, চতুর্থ ধাপ-২৫ মার্চ, পঞ্চম ধাপ-৩১ মার্চ, ষষ্ঠ ধাপ-৩ মে। সে অনুযায়ী ১৫ মার্চ ৭৪ উপজেলা, ২৫ মার্চ ৭২ উপজেলা, ৩১ মার্চ ৬৫ উপজেলা ও ৩ মে ৫৭ উপজেলায় নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।