স্বাস্থ্যের অনিয়মে ক্ষতির টাকা দুই মাসের মধ্যে আদায়ের সুপারিশ
কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল-এর অডিট আপত্তিতে প্রকাশিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জালিয়াতির মাধ্যমে নকল টেস্ট রিপোর্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে ঠিকাদারকে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ ৩৩ শতাংশ রড কম ব্যবহার করা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে সংঘটিত এসব অনিয়মে সরকারি ক্ষতির টাকা দুই মাসের মধ্যে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র ২৯ ও ৩০তম বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী। কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জহিরুল হক ভূঞা মোহন, মনজুর হোসেন, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও মো. জাহিদুর রহমান বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
সংসদের গণসংযোগ বিভাগ জানায়, বৈঠকে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় লাইসেন্স নবায়ন ফি, তালিকাভুক্তি ফি, ফর্ম বিক্রি, টেন্ডার সিডিউল বিক্রি বাবদ আদায়কৃত রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা না করে অনিয়মিতভাবে বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখায় সরকার ৯ কোটি ২৬ হাজার ৫২,৭৫৯ টাকা রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হয়।
এসব অডিট আপত্তি নিয়ে প্রধান হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় বলেছে, সরকারি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার ফলে সে টাকা থেকে যে সুদ হয়েছে, সুদসমেত তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। একইভাবে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে নকল টেস্ট রিপোর্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে ৩টি পূর্ত কাজের ৭ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৬১ টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ’ শিরোনামের অডিট আপত্তি পর্যালোচনা করে কমিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত অর্থ আদায়ের সুপারিশ করে। একই অর্থবছরের মন্ত্রণালয়ের ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ কাজে ৩৩ শতাংশ রড কম ব্যবহার করা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করায় সরকারের ২ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৫ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। কমিটি এই টাকা ২ মাসের মধ্যে আদায় করতে সুপারিশ করে। এছাড়া ‘নির্মাণ কাজ সম্পাদনে ব্যর্থ ঠিকাদারের কার্যাদেশ জরিমানার ভিত্তিতে বাতিল করা সত্ত্বেও জরিমানার অর্থ আদায় না করায় সরকারের ৩ কোটি ১৪ লাখ ৭১,৬৮৩ টাকা আর্থিক ক্ষতি’ হয়। এসব টাকা আদায় ও বিভাগীয় তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠকে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল, পররাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।