বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Saturday, September 21, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » শঙ্কা কাটাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা জরুরি

শঙ্কা কাটাতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা জরুরি 

image-362132-1604690151

দেশে করোনার পাশাপাশি শীতজনিত রোগের প্রকোপও দেখা দিচ্ছে। মৌসুমের শুরুতেই বয়স্ক এবং শিশুদের মাঝে রোগ দুটি ধীরে ধীরে বাড়ছে। উভয় রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ কাছাকাছি। ফলে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।

এক্ষেত্রে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসার জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে হবে। এজন্য সময় ও ব্যয় কমাতে সারা দেশে দ্রুত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তারা উভয় রোগ থেকে রক্ষায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

নয় মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা মহামারী অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এরই মধ্যে শীত চলে এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ মৌসুমে তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত জীবাণুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। ফলে শীতে মানুষ সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থ্রাইটিস, চামড়ার শুষ্কতার মতো রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, শীত যেহেতু আসছে তাই শীতের রোগও ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। স্বাভাবিক শীতকালীন রোগব্যাধির পাশাপাশি কোভিড আতঙ্ক তো রয়েছেই। এই সময়ে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

তিনি বলেন, সমন্বিতভাবে কোভিড ও শীতজনিত রোগ মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোভিড বাদ দিয়ে কোনো চিন্তা করা যাবে না। তাই বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। উদাসীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, এ সময়ে হাঁপানি, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব থাকে। এছাড়া শীতে সবাই জানালা-দরজা বন্ধ রাখে- যা কোভিডের জন্য সহায়ক। যেহেতু এসব রোগে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন কোভিড, নন-কোভিড সব চিকিৎসাই চলছে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকার বাইরের কয়েকটি জেলায় হঠাৎ করেই শীত পড়ে গেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার একটু আগে শীত আসায় কারও প্রস্তুতি তেমন ছিল না। ফলে শুরুর ঠাণ্ডা ধাক্কা দিয়েছে বয়স্ক এবং শিশুদের। এতেই আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে গেছেন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমে এর তথ্য নেই। তারা নভেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শীতজনিত রোগের পরিসংখ্যান নেয়া শুরু করে।

বিগত বছরগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মৌসুমে দৈনিক সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার থেকে ৫ হাজার মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায়, এআরআই-এ (অ্যাকিউট রেসপারেটরি ইনফেকশন) এবং অন্যান্য রোগই (জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ এবং জ্বর) বেশি।

এদিকে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার ১৮৪২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা ছিল গত ৫৬ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এদিন ১৭ জনের মৃত্যু হয়। বুধবার দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়ায়। ওইদিন দেশে ২১ জনের মৃত্যু হয়। নতুন করে শনাক্ত হয় ১৬৫৯ জন। মঙ্গলবার প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন ১৭৩৬ জন, মারা যান ২৫ জন।

এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, শীতজনিত রোগের লক্ষণ ও করোনার লক্ষণ প্রায় একই রকম। এক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণযুক্ত সব রোগীর সুচিকিৎসা ও নিরাপত্তায় কোভিড পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে আরটিপিসিআর পরীক্ষায় যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনি ব্যয়বহুল। তাই এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টির আগেই যত দ্রুত সম্ভব সারা দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করতে হবে। পাশাপাশি পুরনো অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকে, যা এই সময় মারাত্মক পর্যায়ে যেতে পারে। তাই তাদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট- আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে বাংলাদেশে শীতকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয় না। এই সময়ে ঠাণ্ডা, কাশি এমনকি নিউমোনিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যায় বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হন। তাই এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। উদাসীন না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ ধরনের সংক্রমণ থেকে অনেকটা নিরাপদে থাকা সম্ভব।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone