তীব্রতর ভারতের কৃষক আন্দোলন; অনশনে কৃষকরা ও আপ নেতা কেজরিওয়াল
কেন্দ্রের কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আরও বড় পদক্ষেপ নিল আন্দোলনকারী কৃষকরা। এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত অবরোধ করে গত ১৯ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, বিহার, মহারাষ্ট্রসহ কয়েকটি রাজ্যের কৃষকরা। সমস্যা সমাধানে কৃষক সংগঠনের সাথে সরকারের পাঁচ-পাঁচটি বৈঠকও হয়েছে কিন্তু কোন সমাধান বেরিয়ে না আসায় সোমবার অনশনে বসেন কৃষকরা। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিক্ষোভরত স্থানগুলিতে অনশন শুরু করেন তারা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
কৃষকদের অনশনের সমর্থনে সোমবার গোটা দিন অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। কেজরির সাথেই অনশনে সামিল হন দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিশোদিয়া। টুইট করে তিনি লেখেন ‘উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। আপনারা যে যেখানেই থাকুন না কেন দয়া করে আমাদের কৃষক ভাইদের সমর্থনে উপবাস শুরু করুন। তাদের এই আন্দোলনের সাফল্য কামনায় দোয়া করুন। তারা নিশ্চয়ই জয় পাবে।’
তবে এবারই নয়, আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে কয়েকদিন আগেই দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে গিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন কেজরিওয়াল।
অনশনে বসায় কেজরিওয়ালকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। ‘এটাই হল কেজরির ভণ্ডামি। পাঞ্জাব বিধানসভার নির্বাচনে কেজরিওয়াল এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটি (এপিএমসি) সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, গত নভেম্বরে আপনি কৃষি আইন নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। অথচ আজ আপনি অনশনে বসেছেন। এটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।’
এদিন সকালে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের গাজীপুর এলাকায় ২৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী কৃষকরা। এর ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। তবে কৃষকদের ওই আন্দোলনে এদিন সকালে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দিতে গেলে তাতে সায় দেয়নি আন্দোলনকারী কৃষকরা।
ইতিমধ্যেই আপ’এর মতো কংগ্রেস তৃণমূল, বসপা, সপা, সিপিআইএমসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল কৃষকদের এই আন্দোলনকে আগেই সমর্থন জানিয়েছে। রাহুল গান্ধী, কেজরিওয়াল, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, অখিলেশ যাদবের মতো নেতারা নতুন কৃষি আইনকে ‘কালা আইন’ বলে অভিহিত করে তা প্রত্যহারের দাবিও জানিয়েছেন। ফলে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই কৃষক আন্দোলন অন্য চেহারা নিয়েছে।
এদিকে যত দিন গড়াচ্ছে ততই আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন দেশের অন্য প্রান্তের কৃষকরাও। তেমনি কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে পদক ফেরানোর পালাও চলছে। রবিবারই কৃষকদের সমর্থনে নিজের চাকরি জীবন থেকে ইস্তফা দিয়েছেন পাঞ্চাব পুলিশের ডিআইজি (কারা) লক্ষীন্দর সিং ঝাকর।
সোমবারও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, সরকার কৃষকদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বণিক সভা ফিকি’র ৯৩ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজনাথ বলেন, ‘কৃষি এমন একটা ক্ষেত্র যেটা করোনা অতিমারীর বিরূপ প্রভাব এড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের উৎপাদন ও সংগ্রহ প্রচুর পরিমাণে আছে এবং আমাদের গুদামঘরও ভর্তি।’
রাজনাথ আরও জানান, ‘আমাদের কৃষিক্ষেত্রের বিরুদ্ধে কখনও পশ্চাদমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কৃষকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সাম্প্রতিক সংস্কারগুলি নেওয়া হয়েছে।’
একদিকে কৃষকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সরকার যখন সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্করের একটি মন্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। রবিবার বিহারে একটি জনসভা থেকে রবিশঙ্কর বলেন ‘কৃষক আন্দোলনের পিছনে ‘টুকরো টুকরো গ্যাংয়ের মদদ রয়েছে, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে দিল্লিতে কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার জানান, যারা এই কৃষি বিলের বিরোধিতা করছে তাদের চরিত্র অনেকটা বামপন্থীদের মতো-যারা জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ, নতুন নাগরিকত্ব আইন ও রাম মন্দিরের বিরোধিতা করেছিল।’
তবে কৃষকরা যখন তাদের আন্দোলন তীব্রতর করছে তখন কৃষক সংগঠনের সাথে পরবর্তী বৈঠকের আভাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী কৈলাস চৌধুরী। শিগগির তার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। তার অভিমত সকলে মিলে বৈঠকে বসলেই সমস্যার সমাধান মিলবে। এখনও পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে পঞ্চম দফার বৈঠক হলেও সমাধান সূত্র অধরা। গত ৯ ডিসেম্বর ষষ্ঠ দফার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও কৃষকদের অসম্মতিতে তা বাতিল করা হয়। সরকারের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা যেকোন সময় আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু কৃষক সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে আইন প্রত্যাহার না করা হলে কোন আলোচনায় বসতে তারা রাজি নয়।
সিঙ্ঘু সীমান্তে বসে কৃষক আন্দোলনের নেতা গুরনাম সিং চৌধুরী ফের জানিয়েছেন, আইন প্রত্যহার না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন প্রত্যহারের কোনও প্রশ্নই নেই।
অন্যদিকে দিল্লি সীমান্ত থেকে কৃষকদের হটিয়ে দেওয়া সম্পর্কিত একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে। কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইনের প্রতিবাদে দিল্লির বিভিন্ন সীমান্তে কৃষকদের আন্দোলনের ফলে সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাছাড়া এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। আর সেই প্রেক্ষিতেই আন্দোলনকারী কৃষকদের ওই স্থান খালি করে নির্দিষ্ট স্থানে চলে যেতে, কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনের ছাত্র ঋষভ শর্মা।