বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Friday, January 10, 2025
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » কাশ্মীরে জেলা উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া

কাশ্মীরে জেলা উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া 

141455_bangladesh_pratidin_jammu-and-kashmir

কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ অশান্তি চান না। পাকিস্তানের প্ররোচনা থাকলেও তাঁরা যে গণতন্ত্রের পক্ষে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন জেলা উন্নয়ন পর্ষদের (ডিডিসি) ভোটে। ডিডিসির সঙ্গে হচ্ছে পঞ্চায়েতের শূন্য আসনের নির্বাচনও। সেই নির্বাচনেও ব্যাপক সাড়া মিলছে।

গত বছর জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারার বিশেষ মর্যাদা বিলোপ হওয়ার পর এটাই প্রথম নির্বাচন। শুরুতেই বাজিমাত। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা গণতন্ত্রের পক্ষে। কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ ভারতের গণতন্ত্রের ভিতকে আরও শক্ত করল।

স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাশ্মীরিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণই প্রমাণ করে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দিলেও উপত্যকার মানুষ শান্তি চান। চান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এলাকার উন্নয়ন। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথমবার সুযোগ পেয়েই উপত্যকার মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা উন্নয়নের পক্ষেই রয়েছেন।

ডিডিসি-র নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ নিজেদের আস্থা ব্যক্ত করলেন ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর ওপর। অংশ নিলেন গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবে। নির্ভয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন তাঁরা। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকেই এবারের নির্বাচন ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং।

পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি এবং তাদের দোসর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সমানে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ভোট বানচালের। চেষ্টা হয়েছে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির। কিন্তু সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে বড় সংখ্যায় মানুষ এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কাশ্মীর উপত্যকায় এখন প্রচণ্ড শীত। বরফ পড়ছে বহু জায়গায়। সেই ঠাণ্ডার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে করোনা ভীতিও। কোভিড-১৯ কাশ্মীরের মানুষকেও আতঙ্কিত করে তুলেছে। কিন্তু সবকিছুকে উপেক্ষা করে কভিড প্রোটোকল মেনেই কাশ্মীরিরা ভোটে অংশ নিচ্ছেন।

ডিডিসির নির্বাচন আসলে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পক্ষে নতুন দিশা দেবে। তৃণমূল স্তরেও নিয়ে আসবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সামিল হবেন আম-আদমি। জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসাবে গঠনের পর এই প্রথম পঞ্চায়েতরাজ আইন বলে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের ভোটে বহু নতুন মুখকে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। ৩৭০ ধারা বিলোপ না হলে এটা সম্ভবই হতো না। অনেকেরই স্থানীয় প্রশাসনে কাজ করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেতো।

ভারত সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগের সুবিধা করে দিয়েছেন। মোট আট দফায় হচ্ছে ডিডিসি ও পঞ্চায়েতের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। ভোট শুরু হয়েছে ২৮ নভেম্বর। শেষ হবে ১৯ ডিসেম্বর। ভোট গণনা ২২ ডিসেম্বর। ডিডিসির মোট ২৮০টি আসন রয়েছে। পঞ্চায়েতের মোট শূন্য আসনের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৪১। ভোট গ্রহণের সময় সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। নির্বাচন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রথম দফায় ২৮০টির মধ্যে ৪৩টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়। পাকিস্তানি অপপ্রচারকে উপেক্ষা করে প্রথম দফায় ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মানুষ নির্বাচনে অংশ নেন। ভোট নিয়ে ভারতেরও অনেকেই অপপ্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু সমস্ত কুৎসাকে জবাব দিয়েছেন কাশ্মীরের মানুষই। তাঁরা বিরাট সংখ্যায় নির্বাচনী বুথে হাজির হয়ে ভোট দিলেন। প্রথম দফাতেই বোঝা গেল মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে।

এতে করে রাজ্যের মানুষের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভোট বয়কটের ডাককে আমলই দেননি কাশ্মীরিরা। তাই প্রথম দফাতেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়। শুরুতেই বোঝা যায় কাশ্মীরের মানুষ নির্বাচনে অংশ নিতে পেরে খুশি। বাকি দফাগুলোতেও যে ভোট ভালো হবে তাঁর আবাস মেলে প্রথম দফাতেই।

দ্বিতীয় দফাতেও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যটির ডিডিসির ৪৩টি আসনে ভোট হয়। এবারও নির্বিঘ্নেই ভোটে অংশ নেন সাধারণ মানুষ। তবে প্রবল শৈত্যপ্রবাহের কারণে ভোটের হার প্রথম দফার থেকে ছিল খানিকটা কম। ভোট পড়ে ৪৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। রাজ্যের বান্ডিপোরায় ভোট পড়ে ৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বারামুলার লালপোরা, কুঞ্জেরের পোলিং বুথে ১০৫ বছরের বৃদ্ধাকেও ভোট দিতে আসতে দেখা গিয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও উচ্ছ্বসিত। তাঁদের মতে, উপত্যকার মানুষ বলিষ্ঠ-ভাবেই গণতন্ত্রের পক্ষে তাঁদের মত দিয়েছেন। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর যাবতীয় ষড়যন্ত্র উপত্যকার মানুষই বানচাল করে দিয়েছেন বলে তাঁরা মনে করেন। বহুদিন ধরেই সন্ত্রাসের কারণে কাশ্মীর উপত্যকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন।

কিন্তু ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীর এখন স্বাভাবিক ছন্দের ফিরতে মরিয়া। ডিডিসির ভোটে দ্বিতীয় দফাতেও সেটাই বোঝা গেল। কাশ্মীরি ভোটাররা নিন্দুকদের জবাব দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করে চলেছেন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। পাকিস্তানি মদতপ্রাপ্ত জঙ্গিদের পাশাপাশি তাদের দেশীয় এজেন্টদেরও উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চাইছেন উপত্যকার মানুষ। এবারের ভোটে সেটাই তাঁরা বোঝাচ্ছেন।

প্রথম আর দ্বিতীয় দফার ভোটেই বোঝা গিয়েছিল, ষড়যন্ত্রকারীরা কিছুই করতে পারবে না। জঙ্গি আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড় হন। প্রার্থীদের মধ্যেও ছিল আত্মবিশ্বাস। নির্ভয়ে ভোট প্রচারের সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

প্রথম দুই দফার অভিজ্ঞতার নিরিখে তৃতীয় দফার ভোটেও নির্বাচন কমিশন ও জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। মানুষ আরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশ নেন। ৫০.৫৩ শতাংশ ভোট পড়ে তৃতীয় দফায়। আধুনিক কাশ্মীরের ইতিহাসে এটাও রেকর্ড। ইমরান খানের সরকার কাশ্মীরের ভোট নিয়ে কম কুৎসা রটায়নি। কিন্তু সেইসবে কান না দিয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে ৩৭০ ধারা বিলোপের সুবিধা নিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকেই বেছে নেন।

কাশ্মীরের এক শ্রেণির মানুষ পারিবারিক শাসনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। এবারের নির্বাচনে তাঁদেরকেও উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। একই ছবি চতুর্থ দফাতেও ধরা পড়ে। সাধারণ মানুষ উৎসবের মেজাজে ভোট দেন। ৭ ডিসেম্বর ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দেন বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের এই নির্বাচনে শত শত শিক্ষিত ছেলেমেয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। বেকার যুবক-যুবতীরাও এগিয়ে এসেছেন উন্নয়নের অংশীদার হতে। হার বা জিত তো থাকবেই নির্বাচনে। কিন্তু গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার এই নির্বাচনে তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অবশ্যই কাশ্মীরের উন্নয়নে বড় ভূমিকা নেবে। তৃণমূল স্তরের সাধারণ মানুষরাই তৃণমূল স্তরে প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ পেতে চলেছেন।

ফলে সমাজের একেবারে নিচের তলায়ও পৌঁচে যাচ্ছে ভারতীয় গণতন্ত্রের শিকড়। ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টাকে উপেক্ষা করে ভোট প্রার্থীরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন বন্দুকের নল নয়, শান্তিই উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। গণতন্ত্রই পারে কাশ্মীরের উন্নয়নকে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে এখনো পর্যন্ত যে গতিতে উন্নয়ন হচ্ছে উপত্যকায় তাতে মানুষের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে।

আর এটারই প্রমাণ মিলছে এবারের স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনে। আগে এ ধরনের ভোটে কাশ্মীরে ১০ শতাংশ মানুষও অংশ নিতেন না। আর এখন ৫০ ছাড়িয়েছে ভোটের হার। ডিডিসি নির্বাচনই বুঝিয়ে দিচ্ছে কাশ্মীরের মানুষ ৩৭০ ধারা বিলোপে খুশি হয়েছেন। পাকিস্তানি অপপ্রচারের যেকোনো সারবত্তা নেই সেটাও বোঝা যাচ্ছে ডিডিসির নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণেই।

আসলে কাশ্মীরের মানুষ শান্তি চান। তাঁরা চান উন্নয়ন। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা বুঝেছেন শান্তি না থাকলে উন্নয়ন হয় না। তাই তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উৎসবে তাঁরা সকলেই মেতে উঠেছেন নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব পালনে। ৩৭০ ধারা বিলোপ তাঁদেরকে আরও বেশি করে ভারতীয় হয়ে উঠতে সহায়ক হয়েছে। নিজেরাই অংশীদার হয়ে উঠছেন এলাকার উন্নয়নে।

১৯৯০ সাল থেকেই কাশ্মীরিরা পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের শিকার। উপত্যকার উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৭০ ধারা। সেই আইন বিলোপের পর কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। কাশ্মীরের সকল শ্রেণির মানুষের সামনে এসেছে উন্নয়নের সুবর্ণ সুযোগ। আপেল বাগান থেকে শুরু করে রেশম শিল্প, সর্বত্রই পরিকাঠামো উন্নততর করতে মরিয়া সরকার।

সেই সঙ্গে উন্নয়নের শত্রু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ, আধা-সেনা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ও বেড়েছে। মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসন, পঞ্চায়েত ও ডিডিসি-কে আরও বেশি সক্রিয় করে তোলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষও তৃণমূল স্তরের এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের আস্থা ব্যক্ত করছেন। বুঝিয়ে দিচ্ছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিদের বুলেটের জবাব তাঁরা ব্যালটেই দিতে চান।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone