জামিন পেলেন মাহমুদা আক্তার
আদালত প্রতিবেদক : তাজরীন ফ্যাশনসের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারের এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রতি রোববার আদালতে হাজিরা দেওয়ার শর্তে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়।
আজ সোমবার মুখ্য বিচারিক হাকিম ইসমাইল হোসেন তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন। পরে আদালত মাহমুদার জামিন মঞ্জুর করলেও দেলোয়ারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ বহাল রাখেন।
গতকাল রোববার সকালে তাঁর বিচারিক হাকিম তাজুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবীর গতকাল দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর স্ত্রী আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারিক হাকিম প্রকাশ্য আদালতে উভয়ের জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে নথিতে দেখা যায়, আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে জামিনের শুনানির বিষয়ে আজকের দিন ধার্য রাখেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ শুনানি হলে আদালত এ আদেশ দেন।
২০১২ সাল ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লাগে। এতে অন্তত ১১১ জন নিহত, দুই শতাধিক আহত ও অসুস্থ হয়েছেন। ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কারখানায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে একটি মামলা করে। ঘটনার কয়েক দিন পর রেহানা নামের নিখোঁজ এক শ্রমিকের ভাই আবদুল মতিন ঢাকার নিম্ন আদালতে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালত আশুলিয়া থানাকে তা তদন্তের নির্দেশ দেন।
১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
ঘটনার এক বছর আট দিনের মাথায় গত ২২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যা, নরহত্যা, অগ্নিসংযোগ করে সম্পদের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়নি বলা হলেও অভিযোগপত্রে তেমন কোনো অভিযোগ উল্লেখ করা হয়নি।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন তাজরীনের এমডি দেলোয়ার হোসেন, তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহাবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান ওরফে দুলাল, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন ওরফে মঞ্জু, দুলাল উদ্দিন, হামিদুল ইসলাম, আল আমীন, আনারুল, মো. আল আমীন, শামীম মিয়া ও আনিসুর রহমান। শেষোক্ত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন জামিনে ও একজন কারাগারে আছেন।
অভিযোগপত্রে তিনজনকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। তাঁরা হলেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার সোহেল রানা, কাটিং লোডার সুজন হাওলাদার ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস। মামলায় ১০৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, কারখানা ভবনটি ইমারত নির্মাণ আইন মেনে করা হয়নি। শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। তিনটি সিঁড়ির মধ্যে দুটি নিচতলার গুদামের ভেতরে এসে শেষ হয়েছে। ওই গুদামে আগুন লাগার পর শ্রমিকেরা বের হতে চাইলে কারাখানার ম্যানেজার শ্রমিকদের বাধা দিয়ে বলেন, আগুন লাগেনি। অগ্নিনির্বাপণের মহড়া চলছে। তিনি বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন। ফলে শ্রমিকেরা নিচে নামতে পারেননি। মালিকের অবহেলাজনিত হত্যা ও নরহত্যার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলে উল্লেখ করে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৫, ৪৩৬, ৩০৪, ৩০৪-ক ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।