এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলন
মোরশেদ ইকবাল, ঢাকা : আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগ জেলা সম্মেলন। তার আগে মার্চের মধ্যেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন কমিটি গঠন সম্পন্ন করা হবে। আজ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষনেতা।
দলীয় সূত্রমতে, দলের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ১৪টিতে সম্মেলন করা সম্ভব হয়েছে। অন্তত ২০টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই বহু বছর ধরে। ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে কমিটি পরিচালনা হচ্ছে প্রায় ১৫টি জেলার কর্মকাণ্ড। কোনো কোনো জেলায় দীর্ঘ ১৬ বছরেও সম্মেলন নেই। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে জেলার নেতৃত্ব। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা বেশি নাজুক। আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যান গার্ড হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও দীর্ঘ ১৪ মাসেও ঘোষণা করা হয়নি কমিটি। অবশ্য কামরাঙ্গীচর থানার সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগরীর সব থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে সম্মেলনের শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটাতে এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন, সহযোগী সংগঠনগুলোকে চাঙ্গা এবং অধিক কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজকে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ঢাকা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলার সম্মেলন না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার নেতৃত্ব। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত জেলাগুলোতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না দলের তৃণমূল। যে কারণে বিগত কয়েক মাস আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি নাশকতা চালালেও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। এসব জেলাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে জেলা সম্মেলন শুরু করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে ভাগ করে কমিটিও ঘোষণা করার চিন্তা চলছে। সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছিলেন, উপজেলো পরিষদ নির্বাচনের পর একদম তৃণমূল থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠনের কাজে হাত দেবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রমতে, আগের মেয়াদে সরকার গঠন করার পর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মূলত নেতাশূন্য। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় জমজমাট থাকলেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেউই বসেন না। এখান থেকে দলীয় কোনো কার্যক্রমও পরিচালনা হয় না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয় থেকেই দলীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই অফিসে দলের সাধারণ সম্পাদক আসেন কালেভাদ্রে। কোনো সংবাদ সম্মেলন বা বৈঠক হলেই কেবল তিনি আসেন। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় অনেক নেতা এই কার্যালয়ে না এলেও মন্ত্রিত্ব হারিয়ে অনেকে এখন এই কার্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন।
বিগত মহাজোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় দলীয় কর্মকাণ্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা তো দূরের কথা, সহযোগী সংগঠনগুলো বছরের পর বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চললেও সেদিকে কোনো নজর ছিল না দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের। যে কারণে এবারের মন্ত্রিসভায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ রাখা হয়েছে। দলের সভানেত্রী জানিয়েছেন, দল এবং সরকার একাকার করতে চাই না।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নড়েচড়ে বসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।