সুষম খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
\
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সুষম খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুষম খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে জরুরি ও প্রয়োজন। এটা নিরাপদ খাদ্যের মধ্যেও পড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী জনগণ বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী নারীরা পুষ্টির জন্যে কিভাবে এই সুষম খাবার গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ সম্পর্কিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষকে একটি অনুরোধ করবো- নিরাপদ খাদ্যের জন্য কেবল ল্যাবরেটরি টেষ্ট করলেই হবে না। সেই সঙ্গে আরেকটি কাজ করতে হবে- সুষম খাদ্য কিভাবে গ্রহণ করতে হবে তা প্রচার করতে হবে।তিনি বলেন, খাদ্যটা কিভাবে নিলে সেটা সুষম হবে, সেটা যেমন মাথায় রাখতে হবে তেমনি প্রচারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।সরকার প্রধান বলেন, অতীতে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দেশের মানুষদের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় নুন মরিচ দিয়ে পেট ভরে চারটে ভাত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করলেও এখন কিছুটা আমিষও ক্রয় করতে পারছে।মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আরো যাতে বাড়ে, তাদের যেন আর্থিক সচ্ছলতা আসে সেজন্যই তাঁর সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।তিনি এ সময় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার কঠোর সমালোচনা করে এ বিষয়েও জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম স্বাগত বক্তৃব্য রাখেন।গণভবন প্রান্তে অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালসহ পিএমও এবং গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ব্যবসা করছেন তারা দু’পয়সা বেশি আয়ের জন্য খাদ্যে ভেজাল দেয় বা পচা,গন্ধ, বাসী খাবার পরিবেশন করে থাকে। এভাবে নিজের লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি আর করবেন না।তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারেও একদিকে যেমন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে অন্যদিকে কঠোর হাতে তা দমনও করতে হবে। দুদিকেই ব্যবস্থা নেয়াটা একান্তভাবে দরকার।তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সেই ব্যবস্থাগুলোও আপনাদের নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১শটি খাদ্যশিল্পে ‘সেফ ফুড প্ল্যান’ যে নেয়া হচ্ছে এটি সারাদেশেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন এবং একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এটা নিয়ে যেতে হবে। আর দেশে কেন্দ্রিয়ভাবে ফুড টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা বিভাগীয় পর্যায়েও করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল এবং ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে তখন ২৬ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত খাদ্য গুদামে রেখে গিয়েছিল। এর ৮ বছর পর যখন আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ২৪ লাখ মেট্রিক টন।তিনি বলেন, এটি যে দল বা ব্যক্তি বিশেষগণ ক্ষমতায় থাকেন তাদের নীতির প্রশ্ন। আমাদের নীতি হচ্ছে নিজেরাই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করবো এবং সেইসঙ্গে পুষ্টি নিশ্চিত করার দিকেও আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে আমদানী করায় বেশি উৎসাহি ছিল। কেননা, তাহলে তাদের কিছু মানুষের ব্যবসা হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসেনি।তিনি বলেন, ‘আমরা সেবক হিসেবে এসেছি। কাজেই, নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কারো কাছে হাত পেতে চলতে চাই না।’খাদ্যের সাথে সাথে যেন পুষ্টির নিশ্চয়তা থাকে, সেজন্য তাঁর সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অতি দরিদ্র জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় দেশের ২২০টি উপজেলায় ৬ ধরনের অণুপুষ্টি সমৃদ্ধ ‘পুষ্টিচাল’ বিতরণ করা হচ্ছে।তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি উপজেলায় পুষ্টি চাল বিতরণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও, হেলদি মার্কেট, হোটেল রেস্টুরেন্ট গ্রেডিং করে গ্রিন জোন প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যা যা করা প্রয়োজন তার সবকিছুই করা হবে।
সরকারের ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল ও দূষণমুক্ত নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছি।তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি সমন্বয়কারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে ৩টি বিধিমালা, ৭টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
হোটেলগুলোতে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে তাঁর সরকারের গ্রেডিং স্টিকার প্রদানের তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলাতেও তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী করোনার কারণে মানুষের মধ্যে পরিচ্ছন্ন থাকার প্রবনতা সৃষ্টি হওয়ায় এটিকে বিশেষ ইতিবাচক দিকে হিসেবে আখ্যায়িত করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতাটা এসেছে এবং মানুষ এখন নিজেরাই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করে।’তিনি এ প্রসঙ্গে করোনাকালিন নিয়মিত ফেস মাস্ক ব্যবহার এবং ঘন ঘন হাত পরিস্কার করার বিষয়টিও সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন।
মুজিববর্ষ উদযাপনকালে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে এসে প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল গৃহহীন-ভূমিহীনকে অন্তত একটি ঘর নির্মাণ করে হলেও ঠিকানা গড়ে দেওয়ার এবং প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুতের আলো জালাবার অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না। সকল ঘরেই আমরা আলো জালাবো।’মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশব্যাপী চলমান বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে সকলকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরেও গুরুত্বারোপ করেন।তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেককে অনুরোধ করবো যার যেটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় আনেন। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের রচনা এবং কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।