দেশের ১ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় এসেছে
দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের টিকা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে ১৫টির বেশি দেশ মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের বেশি টিকার আওতায় আনতে পেরেছে। দেশে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ জন। যা এক শতাংশেরও কিছুটা বেশি। এছাড়া যুক্তরাজ্য ২৩ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় এনেছে। আবার আমাদের আগে টিকা কার্যক্রম শুরু করার পরেও জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় ভারত এখনও ১ শতাংশের এ টার্গেট অর্জন করতে পারেনি।‘করোনা সংক্রমণের গতিবিধি ও টিকা’ শীর্ষক বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) সংলাপ অনুষ্ঠানে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধাণ বৈজ্ঞানিক কমকর্তা ড. এ এস আলমগীর এই তথ্য জানান। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।
ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় সংলাপে ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও করোনা প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সালান, একুশে পদকপ্রাপ্ত অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনসাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা.আবু জামিল ফয়সাল প্রমুখ বক্তব্য দেন। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিএইচআরএফের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বি।বক্তারা বলেন, দেশে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম। আমরা স্বস্তির একটি পরিবেশে আছি। এর মানে এই নয় সংক্রমণ কমে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের হার কমার পরে পুনরায় তা বেড়েছে। তাই আমাদের ঢিলেমি দিলে চলবে না। টিকা নেয়ার পাশাপাশি মাস্ক পড়া, ঘনঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো আমাদের মানতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে টিকা মৃত্যু কমাবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা একটি অন্যতম পন্থা। একমাত্র পন্থা নয়।
ড. আলমগীর বলেন, কোভ্যাক্স থেকে মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশকে টিকা সরবরাহ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিলো। তবে এটি বেড়ে ২৭ শতাংশ হতে পারে। দেশে এখন ক্লাস্টার ভিত্তিক সংক্রমণ চলছে কি না তা এ সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে।অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে তা স্বস্তির খবর। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নাই। মৃত্যুর মিছিল ওঠা-নামা করছে। এখন অনেকেই আমাদের দেশে আসবে। ভাইরাসটি যাতে আমদানি হয়ে না আসে সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। টিকা দেওয়ার পাশাপাশি মাস্কও পড়তে হবে। দু’টি মাস্ক পড়লে তা আরো বেশি কার্যকর হবে বলা হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, সংক্রমণ কমলেও ঝুঁকিমুক্ত হইনি। ভবিষ্যতে ঝুঁকির আশঙ্কা আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন জনসমাবেশ হচ্ছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে এই জনসমাবেশ বন্ধের বিষয়ে সরকারের মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।ডা.আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সংক্রমণ কমানো এবং টিকা কার্যক্রম সফল করতে সমাজপতি থেকে শুরু করে ধর্মীয় নেতাসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। নারীরা এ বিষয়ে এগিয়ে আসেনি। বস্তির এবং নিন্ম আয়ের লোকজন এখনো টিকা নিচ্ছে না।
অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, দেশে করোনার টিকা কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অনেক দেশ টিকা চাচ্ছে, কিন্তু তারা টিকা পাচ্ছে না। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে এসে টিকা নিতে চান। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগেই আমাদের সিকোয়েন্সিংয়ের মেশিন ছিলো। কিন্তু এই কাজে আমরা সফলতা দেখাতে পারিনি। কিন্তু করোনা কালে সবাই মিলে যখন কাজটি শুরু করি তখন বড় একটি কাজ হলো। এই বিষয়ে আমাদের আরো বেশি মনযোগ দিতে হবে।