বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ

বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ 

dudok ai

প্রধান প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশনে অনিয়মের তদন্তে বিএনপির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান ১২ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে দুদক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে তিনজনকে। এই তিনজন হলেন- সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান ও সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। আগামীকাল আবদুর রহমান বদির দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হককে ২৩ ফেব্রুয়ারি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানকে ২৪ ফেব্রুয়ারি দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে চলছে অনুসন্ধান কার্যক্রম। সরকারি দল বলে ছাড় মিলছে না কারও।

জানা গেছে, বিএনপির অর্ধশত সাবেক মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও মাত্র একজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করেছে দুদক। তবে তাদের বেশির ভাগ মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল বিগত ১/১১-এর পরপরই। বর্তমান সরকার গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে নতুন মামলা তেমন একটা করেনি। পুরনো মামলাগুলোর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছিল। এবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নজর দিয়েছে নিজ দলের দিকে। এ কারণে দুদক স্বাধীনভাবে অনিয়মের তদন্তকাজ করে চলেছে। জানতে চাইলে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কারও নাম উল্লেখ না করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সাত এমপির হলফনামায় দেওয়া সম্পদের অনুসন্ধান শুরুর পর অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল নয়, যার বিরুদ্ধেই সঠিক তথ্য ও অভিযোগ আসবে তার বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শুরু করা হবে। দুদক এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করবে না। বর্তমান সরকারও দুর্নীতি বন্ধে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ ছাড়া গত ২২ জানুয়ারি দুদকের সাতজন চৌকস কর্মকর্তাকে মন্ত্রী ও এমপির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর জন্য মনোনীত করা হয়। তারা সাবেক ও বর্তমান সাত মন্ত্রী ও এমপির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করবেন।

সূত্র জানায়, সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের স্তূপ জমছে দুদকে। নবম জাতীয় সংসদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বর্তমান সরকারের সাত এমপির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করার পর এমন ধরনের অভিযোগের হিড়িক পড়েছে। এতে ক্ষমতাসীন দলের সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও বিএনপিসহ অন্য দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হওয়ায় জনগণ যেন নড়েচড়ে বসেছে। আগে যারা মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে তথ্য দিতে ও অভিযোগ দাখিলে অনাগ্রাহী ছিলেন তাদের অনেকেই এখন দুদকে অভিযোগ দাখিল করছেন। এ ধরনের অভিযোগ যাচাই করে এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের সাবেক দুই সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও মিয়া গোলাম পরওয়ারের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। অনুসন্ধান চলমান থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আরও নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন দুদকে অভিযোগ আসছে। যাদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, হুইপ এবং এমপি রয়েছেন। এ ছাড়াও শতাধিক সাবেক ও বর্তমান প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে অনুসন্ধান শুরু হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ছাড়াও বিভিন্নভাবে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে নবম জাতীয় সংসদের ৪৮ জন মন্ত্রী-এমপির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করতে গত মাসে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রথম পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের সাতজন এমপি এবং বিএনপি-জামায়াতের সাবেক দুই এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের আওতায় থাকা এমপিরা হলেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও নবম জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও নবম জাতীয় সংসদের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এনামুল হক, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাতক্ষীরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ এম এ জব্বার, বিএনপির সাবেক এমপি শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত চেয়ে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন অধিদফতর থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের ধারণা, এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ পাঁচ শতাধিকের বেশি হবে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই আসছে অসংখ্য অভিযোগ। ডাকযোগে এবং দুদক কার্যালয়ে সরাসরি অভিযোগ দাখিলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আসা অভিযোগের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক পার্বত্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, সাবেক হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনসহ একাধিক অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি খতিয়ে দেখছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুদক স্বাধীন কমিশন হিসেবে কাজ করছে। তারা কতটা স্বাধীন তা ফুটে উঠবে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হবে, তাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা আসছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone