ভদ্রা-হরি নদীর জায়গা দখলের ওপর হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গায় মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা পরিচালনার ওপর তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন এলজিআরডি, পানিসম্পদ, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা, ডিসি ও এসপি খুলনা, খুলনা-৫ এর সংসদ সদস্য, ডুমুরিয়ার সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ মোট ১৪।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ‘ইউনাইটেড দে কিল রিভার্স’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করা হয়। জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’-এর পক্ষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রিটটি করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্ট আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নিশ্চিত করেছেন রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গায় মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা দেওয়া বন্ধ ও অপসারণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা অপসারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রুল জারির পাশাপাশি তিন মাসের জন্য খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গায় মাটি ভরাট/দখল/নির্মাণ/বাঁধ/ইটভাটা পরিচালনার ওপর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক, ডিসি ও এসপি খুলনা, পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার এস্কিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, উপজিলা নির্বাহি অফিসার, এসিল্যান্ড এবং ওসিকে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া খুলনার জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়ার এসিল্যান্ডকে সিএস/আরএস অনুসারে জরিপ করে ভদ্রা ও হরি নদীর সীমানা নির্ধারণ করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার একসময়ের প্রবাহমান নদী ভদ্রা এখন একটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। এর জন্য দায়ী নদীর জমি দখলকারী ইটভাটা, যেগুলো চালাচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ৯টি ইটভাটা চিহ্নিত করেছে খুলনার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডাব্লিউডিবি)। এর মধ্যে খর্ণিয়া ইউনিয়নের ভদ্রা নদীর তীরের চার কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা দখল করে রাখা ইটভাটাগুলোও রয়েছে। যে ইটভাটাগুলোর মালিকদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য (এমপি), উপজেলার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও রয়েছেন।
বিডাব্লিউডিবি খুলনার তালিকায় ভদ্রা ও হরি নদীর তীরবর্তী জায়গায় থাকা মোট ১৮টি ইটভাটার নাম রয়েছে। বিডাব্লিউডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ভদ্রার দুই পাড়ে এবং শোলমারী ও হরি নদীর তীরবর্তী নিচু জায়গায় আরো ইটভাটা স্থাপন করায় তালিকায় আরো নাম যোগ হবে।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, ইটভাটার মাধ্যমে এসব দখলের কারণে ভদ্রার শাখা নদী সালতাসহ সংযুক্ত অন্তত তিনটি খালের স্রোতের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে খারনিয়া ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন, এক সময় ৫০০ মিটার প্রশস্ত ভদ্রা নদী বর্তমানে সংকুচিত হয়ে ১৬-৩০ মিটার হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শীতে নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর দুই পাড় থেকে দখলদাররা খননকারী যন্ত্র দিয়ে মাটি তুলছেন। তারা সেই মাটি ইট বানাতে ব্যবহার করেন। যদিও নদীর জমি দখল করা অপরাধমূলক কাজ, তা সত্ত্বেও দখলদাররা গত ১২ বছর ধরে এসব ইটভাটা চালিয়ে আসছে। ইটভাটা মালিকদের কাছে নোটিশ পাঠানো ছাড়া আর তেমন কোনো ব্যবস্থাই এখন পর্যন্ত নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।