ঢাকার পাশের নদী নিয়ে হচ্ছে মহাপরিকল্পনা
একসময় ঢাকা শহরের বুক চিরে অনেক খাল ছিল প্রবহমান। একে একে সেসব খাল হয়ে যায় বেদখল, হারায় নান্দনিকতা। ওয়াসার কাছ থেকে খালের দায়িত্ব বুঝে পেয়ে এ বছরের শুরুতেই সেগুলো পুনরুদ্ধারে নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে খালের প্রাণশক্তি নদী। ফলে সংযোগস্থল নদীর গভীরতা ও প্রবাহ না থাকলে খাল বাঁচবে কিভাবে? সেসব বিষয় নিয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক শম্পা বিশ্বাস।
কালের কণ্ঠ : খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম কত দূর এগিয়েছে?
আতিকুল ইসলাম : ৩৬ বছর পর্যন্ত খাল আমাদের হাতে ছিল না। আমরা এখন এটা হাতে পেলাম, সেটাকে তো আর ৩৬ দিনে উন্নয়ন করা যাবে না। কিন্তু আমাদের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। খাল দখলমুক্ত করা, সীমানা নির্ধারণ করা। খালের মধ্যে আবারও নৌকা চালাতে হবে। এগুলোই আমাদের ভিশন। এ ক্ষেত্রে আমরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি—এই তিনটি ধাপে কাজগুলো করছি। আমরা এখন খাল দখলমুক্ত করতে কাজ করছি। দখলমুক্ত করার পর খালের পারে গাছ লাগাব, ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেন করব।
কালের কণ্ঠ : ঢাকা মহানগরীর খাল উদ্ধারের পাশাপাশি নদী নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
আতিকুল ইসলাম : আমি মনে করি, নদীমাতৃক দেশে অবশ্যই নদী থাকতে হবে। নদীর নাব্যতা কোনোভাবেই হারানো যাবে না। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নদী পুনরুদ্ধার করতে হবে। কারণ খালের পানিটা নদীতে গিয়ে পড়ে। শুধু এটা নয়, নদীতে যদি নাব্যতা না থাকে তাহলে নদীপথে যাতায়াত ব্যবস্থারও বিঘ্ন ঘটবে। নদী দিয়ে যে কার্গোগুলো যাতায়াত করে, সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই রাজধানী ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ, বালু, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা নদী নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনায় রয়েছে কিভাবে নদীগুলোর পার রক্ষা করা যায়, নাব্যতা ফিরিয়ে আনা যায়। বিশেষ করে কিভাবে নদী বর্জ্যমুক্ত করা যায়। আমাদের কাছে নদীর কোনো বিকল্প নেই। এর সঙ্গে খাল নিয়েও কিন্তু কথা আসছে। খালের গভীরতা বাড়ানো, পারে গাছ লাগানো, ওয়াকওয়ে তৈরি, সাইকেল লেন তৈরির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। ঠিক একইভাবে নদীর পার দিয়ে গাছ লাগানো, সাইকেল লেন করা নিয়েও কিন্তু বড় একটি প্রকল্প আছে, যেটা নিয়ে নৌ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তাদের নদী নিয়ে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। নদী কিভাবে রক্ষা করা যায়, সেটা নিয়ে গঠিত কমিটিতে আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আহ্বায়ক হিসেবে আছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের একদিক দিয়ে সুবিধা হচ্ছে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেমন সিটি করপোরেশন, ঠিক তেমনি নদী নিয়ে কমিটিতেও তিনি আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করছেন। সুতরাং আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাই অচিরেই নদী ও খালগুলোকে দখলমুক্ত করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : খালগুলো থেকে পানি নদীতে গিয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে নদীর প্রবাহ না থাকলে খাল বাঁচবে কিভাবে?
আতিকুল ইসলাম : আমাদের যে স্টর্ম ওয়াটার ড্রেন আছে, সেগুলো ক্লিন করতে হবে। ক্লিন করে সেই পানিকে খালে যেতে হবে, পরে খাল থেকে নদীতে যাবে। সুতরাং এগুলো সবই তো ইন্টাররিলেটেড। আমাদের সারফেজ ড্রেন থেকে পানি যায় খালে। এখন খাল যদি মরে যায় তাহলে সারফেজ ড্রেনের পানিও যেতে পারবে না। ফলে খালটাকে সচল করার জন্য নদী প্রয়োজন। আবার খাল কিন্তু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। তাই নদী যদি মরে যায় তাহলে খালের পানি কোথায় যাবে? খাল ও নদী খুবই আন্ত সম্পর্কযুক্ত। একটি আরেকটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। বৃষ্টির পানিটাও কিন্তু ড্রেন দিয়েই খালে যায় এবং খাল দিয়ে নদীতে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ইন্টিগ্রেটেড ওয়েতেই কাজটি করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা খালগুলোতে কাজ শুরু করেছি এবং আমরা দেখেছি নৌ মন্ত্রণালয় থেকেও নদীর দুই পার দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করেছে। সুতরাং এখানে আমাদের আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। এটা নিয়ে একীভূতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা যেমন খালগুলো পরিষ্কার করার দায়িত্ব নিয়েছি, ঠিক একইভাবে যারা নদী শাসনে দায়িত্বে আছে, সেটা কিন্তু তাদেরই করতে হবে। তারাও অবশ্য কাজ করছে। আমি কিন্তু আগেই বলেছি, রূপনগর খাল দিয়ে আমি নৌকায় তুরাগে যাব। সব কাজের জন্য একটি স্বপ্ন তো সেট করতেই হবে এবং আমি মনে করি, সেটার হাত ধরেই আমরা কাজ আগাচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : নদী নিয়ে আপনারদের তরফ থেকে কোনো সুপারিশ আছে?
আতিকুল ইসলাম : না। আমাদের তরফ থেকে কোনো সুপারিশ নেই। তবে এটা নিয়ে নদী রক্ষা কমিশনই কিন্তু সুপারিশ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা এরই মধ্যে ধাপে ধাপে কাজ শুরু করেও দিয়েছে।