‘আল কায়েদার বাংলাদেশে জিহাদের ডাক বিস্ময়কর ঘটনা’
ডেস্ক রিপোর্ট : সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক আল কায়েদার কথিত একটি অডিও-ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে জিহাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এটাকে বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
আল কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ ইন্টারনেটে প্রচারিত আরবি ভাষায় দেয়া এই বার্তায় বাংলাদেশে, তাদের ভাষায়, ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরডেস্কঃপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেয়া হয়েছে।
তবে এই বার্তাটি আল কায়দার কিনা তার সত্যতা যাচাই করে দেখছে বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সময়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে আল-কায়েদার মতো একটি সংগঠনের বক্তব্য বিস্ময়কর।
অন্যদিকে আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান বিবিসিকে বলেছেন, ”এই অডিও বা আল-কায়েদার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং বাংলাদেশে ইসলামী সংগঠনগুলোকে বিপদে ফেলার জন্যই এটি করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।”
আল কায়েদার প্রচার বিভাগ থেকে জিহাদি ফোরামে পোস্ট করা বক্তব্য আয়মান আল জাওয়াহিরির দেওয়া দাবি করে বাংলাদেশকে একটি বড় জেলখানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়মান আল জাওয়াহিরির কথিত এই বার্তাটির শুরুতেই গতবছরের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশের অভিযান এবং আহতদের বেশ কিছু ছবি দেখানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় মি. জাওয়াহিরির কথিত ওই বক্তব্য।
ভিডিওটিতে বক্তব্যটি শুধুমাত্র অডিও হিসেবে শোনা যায়। আর তার নিচে সাবটাইটেল হিসেবে ইংরেজিতে বক্তব্যের অনুবাদও সংযুক্ত করা হয়।
বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছে জিহাদোলজি ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইটে, যেটি আল-কায়েদার বিভিন্ন ভিডিও নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে। সেখানে বলা হয়েছে ভিডিওটি তৈরি করেছে আল-কায়েদার মিডিয়া প্রযোজনা বিভাগ আস-সাহাব।
‘বাংলাদেশ : আ ম্যাসাকার বিহাইন্ড দ্য ওয়াল অফ সাইলেন্স’ অর্থাৎ‘বাংলাদেশ: নীরবতার দেয়ালের আড়ালে একটি গণহত্যা’ শিরোনামের ভিডিও বার্তাটিতে দাবি করা হয় যে, মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে, কিন্তু মুসলিমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অচেতন।
এই বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মুসলিমরা সেদিকে সামান্যতম নজরও দিচ্ছে না।
প্রায় ২৯ মিনিটের এ ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ একটি ষড়যন্ত্রের শিকার, যার মূলে রয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের দূর্নীতিবাজ সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা।
আল-কায়েদার মতো একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বাংলাদেশ নিয়ে এ ধরনের বক্তব্যকে বিস্ময়কর হিসেবে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক আব্দুর রব খান।
তিনি বলেন, “আল-কায়েদা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলল। যেখানে তাদের বড় কার্যক্রম চলছে, সেসব জায়গা নিয়েই তারা এর আগে কথা বলেছে। বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলাটা আমার কাছে বিস্ময়কর লাগছে।”
অডিও বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে শত-শত মুসলিম আলেমকে কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বলা হয়, তাদের বন্দী করা হচ্ছে, বিচার করা হচ্ছে এবং মৃত্যুদন্ড দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকে বিশাল একটি কারাগার হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
এ বিষয়গুলো উল্লেখের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের দিকেই কিছুটা ইঙ্গিত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন মি. খান।
একইসাথে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ছবি এবং মিঃ জাওয়াহিরির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তাদের প্রতিও সমর্থনের ইঙ্গিত রয়েছে এই বক্তব্যে। তবে পুরো বিষয়টিকে অনেক সাধারণীকরণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন আব্দুর রব খান।
তিনি বলেন, “এটাতে বোঝা যায় যে, এখানকার স্থানীয় বিষয় নিয়ে এবং গত দুই মাসে কি কারণে এত কিছু ঘটল, এমনকী জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলামের পার্থক্য কি – এসব নিয়ে তাদের খুব বেশি ধারণা নেই। তারা খুব বেশি সরলীকরণ করেছে বিষয়টি নিয়ে।”
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে একই শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে দাবি করা হয় মি. জাওয়াহিরির কথিত বক্তব্যে।
এবিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশ সরকার।
তবে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলছিলেন, জঙ্গীবাদের বিষয়ে তারা সবসময়ই সতর্ক রয়েছেন। উচ্চপর্যায়ে আলোচনার পর এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।