ইতিহাস বিকৃতির কারণে বিএনপির ক্ষমা চাওয়া উচিত : তথ্যমন্ত্রী
‘একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি ৭ই মার্চ পালন করেছে’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদেরকে অনুরোধ জানাব, আপনারা এতোদিন ধরে যে ইতিহাসবিকৃতি করেছেন সেটার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান। আর নতুন করে ইতিহাস বিকৃত করার জন্য কোনো দিবস পালন করার ভন্ডামি দয়া করে করবেন না।
আজ মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী তার প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের অনন্য দিকগুলো তুলে ধরেন এবং এ বছর প্রথমবারের মতো দিবসটি পালনে বিএনপির ঘোষণা এবং তাদের বক্তব্যের বিষয়ে কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যখন ঘোষণা দিল তারা ৭ই মার্চ পালন করবে। আমি আশা করেছিলাম ইতিহাসকে মেনে নেওয়ার শর্তে এবং এতোদিন ধরে তারা যে ইতিহাসবিকৃতি ঘটিয়েছে, সেই কলঙ্কমোচনের স্বার্থে তারা ৭ই মার্চ পালন করবে। কিন্তু ৭ই মার্চ পালন করতে গিয়ে যে বক্তৃতাগুলো তারা করেছেন, যেভাবে ভাষণ দিয়েছেন, তা বরং ৭ই মার্চের বক্তব্যের সারমর্মকে খাটো করার জন্যই। অর্থাৎ একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা ৭ই মার্চ পালন করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য মিছিল করতে করতে রাস্তায় বেরিয়ে গেল এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিল, অথচ বিএনপি নেতারা বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখলেন উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, এ ধরণের কটাক্ষ করার উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা দয়া করে এই সমস্ত দিবস পালন করবেন না। ‘আপনারা ক্রমাগতভাবে ইতিহাস বিকৃত করেছেন, এই ৭ই মার্চের ভাষণ ২১ বছর বাজাতে দেননি, বিএনপি এবং এরশাদ সাহেবও যতদিন ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশের রেডিও টেলিভিশনে ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল, বাজাতে দেয়নি, কিন্তু এই ভাষণকে আজকে বিশ্বস্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, জাতিসংঘের দলিল হিসেবে এই ভাষণ স্থান পেয়েছে’, বর্ণনা করেন মন্ত্রী।
স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের জন্য যদি কৃতিত্ব দিতে হয় তাহলে নূরুল হকের কৃতিত্ব জিয়াউর রহমানের চেয়ে অনেক বেশি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ অফিসের প্রয়াত বেয়ারার নূরুল হক, তিনি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি রিক্সা করে সমগ্র চট্টগ্রাম শহরে মাইকিং করেছিলেন। চট্টগ্রাম শহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তখন হত্যাকান্ড চালাচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে তার বুকে গুলি হতে পারে সেটা জেনেও সেদিনকার তরুণ নূরুল হক মানুষকে ঘোষণাটি শুনিয়েছিলেন। আর ২৬ মার্চ সকাল থেকে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। স্বাধীন বাংলা বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। আর জিয়াউর রহমান পাঠ করেছিল ২৭ মার্চ। স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করার জন্য যদি কাউকে বাহবা দিতে হয়, চার দেয়ালের মধ্য থেকে পাঠকারী জিয়াউর রহমানের চেয়ে নিজের জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মাইকিং করা নূরুল হকের কৃতিত্ব অনেক বেশি। বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো এই সত্যগুলো মেনে নেয়ার। স্কুলের দপ্তরিকে হেডমাস্টার বানানোর চেষ্টা করবেন না, ইতিহাসকে মেনে নিয়েই রাজনীতিটা করুন, ক্রমাগতভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করবেন না।
ঢাকা মহানগর শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি কে এম শহিদ উল্যার সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, নাজমুল হক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব মো. মাসুদ করিমসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভাশেষে শিক্ষার্থীদের হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটি তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।