মিরসরাই রেঞ্জের অন্যতম আকর্ষণ ‘বোয়ালিয়া ঝর্ণা’
বর্ষা আসলেই ভ্রমণ প্রেমীদের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠে পাহাড়গুলো। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বেড়ে উঠা ঝর্ণাগুলো তখন ফিরে পায় তার আদিমতম রূপ আর যৌবন। জলপ্রপাতের শো শো শব্দে প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠে নিমিষেই। ঝর্ণার অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি ট্র্যাকিং পথ ও পর্যটকদের অনেক আকর্ষণ করে থাকে। কারণ এডভেঞ্চারের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় এখানে। দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে ঝর্ণার শীতল জলের ছোঁয়া পাওয়ার আনন্দ অন্যরকম।
মিরসরাই রেঞ্জটিকে ঝর্ণার খনি বললে বোধহয় ভুল হবে না! এই একটি পাহাড়ি রেঞ্জেই দেশের অন্যতম সেরা কিছু বৈচিত্র্যময় ঝর্ণার অবস্থান। ঝর্ণার রাজ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এবার যোগ হলো বোয়ালিয়া নামে নতুন ঝর্ণা। অন্য ঝর্ণা থেকে অনেকটা ব্যতিক্রমী এই ঝর্ণা । আবিষ্কার হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। নতুন এই ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন শত শত ভ্রমণবিলাসী মানুষ। এখানে ছোটবড় পাঁচটি ঝর্ণা এবং অনিন্দ্যসুন্দর একটি পাথুরে ঢাল আছে যার নাম উঠান ঢাল। এ ট্রেইলের মূল ঝর্ণা হলো বোয়ালিয়া এবং এ ঝর্ণায় যাওয়া অপোকৃত সহজ। বোয়ালিয়া ঝর্ণার বিশেষত্ব হলো এ ঝর্ণার আকৃতি অদ্ভুত ধরনের। এর আকৃতি অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো এবং বোয়াল মাছের মাথার মতো বলে হয়তো নাম হয়েছে বোয়ালিয়া।
মিরসরাই রেঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর ট্রেইল গুলোর একটি বোয়ালিয়া ট্রেইল। ঝর্ণা, খুম, ক্যাসকেড, সুন্দর ঝিরি পথ এই ট্রেইলটিকে সৌন্দর্যের দারুণ এক ছন্দে গেঁথেছে। এই এক রুটেই আপনি দেখা পাবেন ৩ টি ঝর্ণার। বোয়ালিয়া ট্রেইলে আছে বোয়াইল্যা, বাউশ্যা, অমরমানিক্য ঝর্ণা। এছাড়া আছে ন হাইত্যে কুম, পালাকাটা খুম, উঠান ঢাল, আন্দারমানিক ঝর্ণা, তিন নং ছড়া, কলাতলি ঝর্ণা, লতকাও/ কেম্বাতলী ঝর্ণা এবং লতা বায়ানী। এই ট্রেইলের মূল আকর্ষণ এর হরেক রকমের সৌন্দর্যের কাছেই। এক একটি ঝর্ণা, কুম একেক রকমের সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে বসে আছে। এই যেমন উঠোন ঢাল এখানে প্রায় বাস্কেটবল মাঠের আকারের এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে পানি বয়ে যায় বর্ষায়। এটিকে প্রায় সমতল একটা ঝর্ণা বলা যায়
ভারী বর্ষায় খুব মারাত্মক রূপ ধারণ করে বোয়ালিয়া এবং এ সময়টাতেই এ ঝর্ণাটি সবচেয়ে সুন্দর। মূল ঝর্ণার পানি যেখানটায় পড়ে সেটা অনেকটা গুহা কিংবা গভীর খাদের মতো। ভরা বর্ষায় সাঁতরে এই ঝর্ণায় যেতে হয়। ঝর্ণার ওপরে আরো ছোট ছোট ঝর্ণা আছে এবং ঝিরিপথ খুবই সুন্দর। তবে বোয়ালিয়ার ওপরে যাওয়াটা খুবই বিপজ্জনক এবং ভরা বর্ষায় প্রায় অসম্ভব। বোয়ালিয়া ট্রেইলের মূলত দুইটা পার্ট, উত্তর-পূর্ব আর দণি-পূর্ব। দণি-পূর্বে বোয়ালিয়া যেটি খুব বেশি দূরে না। তবে উত্তর-পূর্বে ট্রেইলে বিভিন্ন নামের আরো চার-ছয়টি ছোটবড় ঝর্ণা রয়েছে। বেশির ভাগ ভ্রমণপিপাসু বোয়ালিয়া দেখে চলে আসে কিন্তু উত্তর দিকের ছড়া হয়ে উঠান ঢাল কিংবা নহাতিকুম ঝর্ণা পর্যন্ত যায় না। অবশ্য উঠান ঢালে যেতে হলে খুব দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। পুরো পথটা যেতে হয় ছড়া দিয়ে হেঁটে হেঁটে।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে মিরসরাই যাওয়া যায় ভাড়া ৪৮০ টাকা। বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ব্র্যাক পোলট্রি কমপ্লেক্স যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১০ / ১৫ টাকা। সেখান থেকে ছড়া ধরে কিংবা পায়ে চলা পাহাড়ি পথ ধরে কিছুটা হাঁটলেই বড় ছড়া পাওয়া যাবে। সেখান থেকে উত্তরে গেলে উঠান ঢাল এবং নহাতিকুম ঝর্ণা। গাইড পাবেন ৩০০ টাকায়।