মিয়ানমারে শেষ বৈঠকে হাসিনা-মনমোহন
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশজোড়া ভোট-বাদ্যির মধ্যেই নিঃশব্দে একটি সম্পর্কের যবনিকাপাত হতে চলেছে আগামী মাসের গোড়ায়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহ এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ কূটনৈতিক সম্পর্ক।
মার্চে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেষবারের মতো শীর্ষ বৈঠকে বসছেন মনমোহন সিংহ। বিমস্টেক সম্মেলনে যোগ দিতে তার মেয়াদের শেষ বিদেশ সফরে মায়ানমার যাচ্ছেন মনমোহন। ভারত এবং মায়ানমার ছাড়াও এই গোষ্ঠীতে রয়েছে ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো দেশ। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মূল সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক হবে মনমোহন-হাসিনার।
এক জন পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করে সদ্য পুনর্নির্বাচিত। অন্য জন দশ বছরের মেয়াদ শেষ করে প্রস্থানের পথে। এটা স্পষ্ট যে কংগ্রেস বা ইউপিএ ক্ষমতায় ফিরলেও মনমোহন আর থাকবেন না এই পদে। তাই মনমোহন-হাসিনার আসন্ন বৈঠকে এক দিকে থাকবে গত পাঁচ বছরের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব। পাশাপাশি সাউথ ব্লকের তরফে ঢাকাকে জানানো হবে যে সরকার বদল হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কোনও পরিবর্তন হবে না। বিদেশ মন্ত্রকের কথায়, যে সরকারই কেন্দ্রে আসুক, ভারতের নিজস্ব কৌশলগত এবং নিরাপত্তার স্বার্থেই ঢাকার সঙ্গে সম্পাদিত সব বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত পদক্ষেপ আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নয়া দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে গিয়েছেন। দূতাবাস সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মনমোহন সিংহ সীমান্ত নিরাপত্তা ক্ষেত্রে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিরীনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সে দেশের ভোট-পরবর্তী সময়ে সমাজের একটি বিশেষ অংশের উপরে যে অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছিল, তাতে যারপরনাই শঙ্কিত ছিল ভারত। সীমান্তে চূড়ান্ত সতর্কতা নিতে নির্দেশও দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিকে। বিপুল অনুপ্রবেশ এবং সীমান্তে হিংসারও আশঙ্কা ছিল। পরবর্তীকালে দিল্লির সরকার জানিয়েছে যে যথেষ্ট ভালোভাবেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে ঢাকার নতুন সরকার। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্পিকারকে আশ্বাসও দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে অবশ্যই প্রাধান্য পাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রফতানির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাংলাদেশ-প্রশ্নে নিজস্ব সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে কিছু হতাশাও রয়েছে মনমোহনের। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফরে গিয়ে কথা দিয়েছিলেন, তার বর্তমান মেয়াদেই তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদন করবেন। সেই মর্মে নির্দেশও দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিতে। দু’দেশের মধ্যে বারবার কূটনৈতিক আলোচনাও হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই চুক্তিগুলি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি মনমোহন সিংহের পক্ষে। তিস্তা ফেঁসে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তিতে। স্থলসীমান্ত চুক্তিটি সংসদে পাশ করানোর জন্য প্রয়োজন ছিল দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বেঁকে বসায় তা-ও রূপায়িত করা যায়নি। হাসিনাকে সেই হতাশার কথা এ বার বিশদে বলবেন মনমোহন।
তবে সাউথ ব্লকের কর্তাদের বক্তব্য, এই চুক্তি দু’টি না হলেও নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক লেনদেনের প্রশ্নে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে দু’দেশ। মদ এবং তামাকজাত দ্রব্য ছাড়া বাংলাদেশের সব পণ্যকেই ভারতের বাজারজাত করার অনুমতি দিয়েছে নয়া দিল্লি।
কম সুদে বড় অঙ্কের ঋণ দেয়া-সহ আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আগাগোড়া চালিয়ে গিয়েছে নয়া দিল্লি। অন্য দিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে আলফা-সহ ভারত বিরোধী উত্তরপূর্বাঞ্চলের সন্ত্রাসের ঘাঁটি প্রায় নির্মূল করেছে হাসিনা সরকার।